আমদানি বন্ধের পরিকল্পনা রিকন্ডিশনড গাড়ি

আমদানি বন্ধের পরিকল্পনা রিকন্ডিশনড গাড়ি

ঢাকা: দেশে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বন্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। চাহিদা মেটাতে দেশেই নতুন গাড়ি সংযোজন বা তৈরি করা হবে।

তবে সরকারের এমন পরিকল্পনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, ক্রেতাদের পছন্দের স্বাধীনতা রাখা উচিত।

সরকার বলছে, নতুন কারখানা গড়ে তুলে পুরনো গাড়ি আমদানি বন্ধ করলে দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বিকশিত হবে। এ লক্ষ্যে সরকার এরইমধ্যে ‘অটোমোবাইল ইন্ড্রাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি-২০২০’ নামের খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে। যেখানে আগামী ৬ বছরের মধ্যে দেশে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।

গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশনড ভেহিকেল ইমপোর্টারস অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) নেতারা বলেছেন, আমরা চাই, দেশেই গাড়ি তৈরির কারখানা গড়ে উঠুক। কিন্তু ক্রেতাদের পছন্দের স্বাধীনতা যেন বিবেচনায় রাখা হয়।

রোববার শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনাও দিয়েছেন বারভিডার নেতারা।

সরকার বলছে, দেশে নতুন গাড়ি সংযোজনের সক্ষমতা গড়ে উঠেছে আমাদের। আমরা বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবো। আমাদের বিশাল বাজার। আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করবো। সেই উদ্দেশ্যেই আমরা গাড়ি তৈরি করতে চাচ্ছি। আমাদের শুরু করতে হবে। তারাতো (বারভিডা) বহুবছর করেছে। কিছু ব্যবসায়ী এতে আপত্তি করলেও দেশের স্বার্থে এটা করা জরুরি।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ‘অটোমোবাইল ইন্ড্রাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি-২০২০’ খসড়া তৈরি করেছে, সেখানে প্রস্তাব করা হয়েছে, স্থানীয়ভাবে সংযোজিত গাড়ির বাজার তৈরি করার লক্ষ্যে ব্যবহৃত গাড়ির আমদানি আস্তে আস্তে কমিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে ছয় বছরের মধ্যে সব ধরনের রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হবে। বর্তমানে পাঁচ বছর পর্যন্ত পুরনো গাড়ি আমদানি করা যায়।

ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বছর থেকে তিন বছরের বেশি পুরনো গাড়ি আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে ষষ্ঠ বছরে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশে সংযোজিত গাড়ির বাজার উৎসাহিত করতে পুরনো গাড়ির ওপর ১০ শতাংশের বেশি অবচয় হিসাব করা যাবে না। দেশে সংযোজিত গাড়ি কিনতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নানা প্রকল্পে সহায়তা করবে সরকার।

বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারিভাবে জাপানি কোম্পানি মিতৎসুবিসির নকশায় গাড়ি সংযোজন করে থাকে প্রগতি ইন্ড্রাস্ট্রিজ। এছাড়া পিএইচপি মোটরস নামের চট্টগ্রামভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ার প্রোটন গাড়ির সংযোজন করছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে গাড়ি সংযোজন কারখানা গড়ে তোলার আগ্রহ দেখিয়েছে ভারতীয় টাটা এবং মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা কোম্পানিও।

এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, “আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি দেশে নতুন গাড়ি তৈরি করবো। রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানিকে আর উৎসাহিত করা হবে না। পর্যায়ক্রমে তারা চলে যাবে। সারা বিশ্বে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। এখন আর বিশ্বে রিকন্ডিশনড গাড়ি চলে না। আমরা এখন আর ওই পর্যায়ে নেই। আমাদেরও সক্ষমতা হয়েছে নতুন গাড়ি বানানোর। ”

তিনি বলেন, “ভাঙা গাড়ি রাখার জায়গা নেই। কর্মসংস্থান কিছুই হয়নি। আমরা নতুন গাড়ি বানানো শুরু করলে কর্মসংস্থান শুরু হবে। একইসঙ্গে আউটসোর্সিংসহ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিকাশ হবে। বারভিডারতো কারখানা বলতে কিছু নেই। তারাতো রংটাও ঠিকমতো করতে পারে না। ”

এ খাতে বারভিডা বিশাল বিনিয়োগ ও কর্ম সংস্থানের কথা বলছে সে বিষয়টি কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আসলে কোনো কিছুই নাই (বারভিডার)। আমরা যখন নতুন গাড়ি বানাবো তখন আরও অনেক বেশি কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ হবে। আমাদের প্রগতিসহ অন্যান্য বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করবে। ”

কোনো মহলকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “কোনো মহল নয়, ওরাই (বারভিডা) মানুষকে জিম্মি করে রাখছে। কাজেই তাদের আর সুযোগ দিতে চাই না। বারভিডার কাছে বাংলাদেশ জিম্মি না। বাজারে নতুন গাড়ি আসবে। মানুষ পুরনো গাড়ি কেনার চেয়ে নতুন গাড়ি কিনবে। ”

বারভিডার সভাপতি আবদুল হক বলেন, “আমরা গাড়ি উৎপাদনের বিরোধী নই, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু ২০৩০ সালের পরে সারা বিশ্ব ডিজেলের পরিবর্তে ইলেকট্রিক গাড়িতে চলে যাবে, সেখানে সরকার ডিজেল বা পেট্রোল চালিত গাড়ির চিন্তা করছে। আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বলেছি, ব্যাপক পরিসরে সার্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে। পাশাপাশি মানুষের চাহিদা, রপ্তানি বাজারসহ দেশের অর্থনীতিকে বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করলে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো। ”

তিনি বলেন, “সরকার যদি মনে করে, গাড়ি সংযোজন করতে হলে আমদানি বন্ধ করতে হবে, তাহলে তো হলো না। তখন বাজারে প্রতিযোগিতা থাকবে না। আমরা টোটাল মেনুফ্যাকচারিংয়ের পক্ষে। কিন্তু এখানে অনেক স্বার্থবাদী মহল ঢুকে পড়েছে। ”

বারভিডার সভাপতি বলেন, “সরকার যদি জনস্বার্থ, দেশের অর্থনীতি ও বিশ্ব বাজারের কথা চিন্তা করে থাকে, তাহলে ফেজআউটের কথাটা যথাযথ হয় না। আমাদের বাজারটা ছোট নয়। দুয়েকটা কোম্পানি এতো গাড়ি তৈরি করতে পারবে না। গাড়ি উৎপাদন করতে গিয়ে একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা মাথায় রাখতে হবে।

আবদুল হক বলেন, “আমাদের এ খাতে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান, প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব আসে এখাত থেকে। ২০ বছর পর কী হবে, সরকারকে তা চিন্তা করতে হবে। এখানে কোনো মহলবিশেষকে সুযোগ দেওয়া যাবে না। ”

অভ্যন্তরীণ বাজার দিয়ে শিল্প দাঁড়াতে পারবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকার যদি গাড়ি রপ্তানি করতে চায়, তাহলে শতভাগ রপ্তানির পরিকল্পনা নিয়ে আসতে হবে। আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। গত ৫০ বছরে আমরা যে অভ্যন্তরীণ বাজার গড়ে তুলেছি তা আরও সম্প্রসারিত হতে পারে বা হওয়া দরকার। কারণ আমরা প্রতিযোগিতা করতে চাই। প্রতিযোগিতা না থাকলে কোনো প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারে না। ”

বারভিডার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর যাত্রীবাহী ১৫ হাজার গাড়ির চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদার ৮৫ শতাংশই রিকন্ডিশনড গাড়ি পূরণ করে। এই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আর ৩০ হাজার মানুষ কর্মরত আছে।

বাংলাদেশে মূলত জাপান থেকে ব্যবহৃত গাড়ি আমদানি করা হয়। এসব গাড়িতে পাঁচ বছর পর্যন্ত অবচয় সুবিধা পাওয়া যায়। জাপানের মানে তৈরি হওয়া এসব গাড়ি টেকসই হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের কাছে পুরনো বা ব্যবহৃত হলেও এসব গাড়ির জনপ্রিয়তা রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত অর্থবছর (২০১৯-২০) বাংলাদেশে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ৫০২টি, যা থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

২৬ দিনে প্রবাসী আয় ২৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা

সূচকের পতনে পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে