বরিশাল: ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট এবং খাল-ড্রেন সংস্কারের দাবি ও রিকশা-হকার উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বরিশালে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ।
মঙ্গলবার (০৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টায় নগরের ফকিরবাগি রোডস্থ বাসদ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাসদ বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব ডা: মনীষা চক্রবর্তী বলেন, বরিশালের জনগণের নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য আমরা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। বরিশালের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিন ধরে জনগণের অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতবছর নভেম্বর মাস ধরে আমরা বরিশালের রাস্তাঘাট, খাল-ড্রেন সংস্কারের দাবিতে দাবিপক্ষ পালন করেছিলাম। তারপর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে শহরের ২/১টি প্রধান সড়ক সংস্কার করা হলেও বর্তমানে বরিশালের ৫৮ কিলোমিটার রাস্তার ৯০ শতাংশ রাস্তাই চলাচলের অনুপযোগী। খানা-খন্দে পরিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে জনগণের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় রাস্তাগুলি পরিণত হচ্ছে নদীতে, পানিবন্দী হয়ে মানুষ অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
তিনি বলেন, নগরের ২২টি খালের অধিকাংশই মৃত এবং তা পুনরুদ্ধারে গত ২ বছরে বরিশাল কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যার ফলে সাম্প্রতিক সময়ে জোয়ারের পানি বেড়ে নগরের প্রধান সড়ক সদর রোডকেও প্লাবিত করেছে, যা বরিশালে অভূতপূর্ব ঘটনা। বরিশালবাসীকে যারা আগামীর বরিশালের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছেন, সেই উন্নয়ন এর ধাক্কা বরিশালবাসী ভাঙাচোরা রাস্তায় চলতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের হার অত্যন্ত উচ্চ, কিন্তু নাগরিক অধিকার এর নিশ্চয়তা দেবার বেলায় তৎপরতা প্রায় অদৃশ্য।
ডা: মনীষা বলেন, এই বৈশ্বিক করোনা দুর্যোগের সময় দেশে-বিদেশে অনেক মানুষ চাকুরিচ্যুত হচ্ছে, কর্মসংস্থান কমছে। ফলে এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই মানুষের শেষ সম্বল তার নিজের কর্মসংস্থান রিকশা, ইজিবাইক বা রাস্তার পাশের ছোট দোকানগুলো উচ্ছেদ করা সমুচিত নয়। বরং এই দুর্যোগের সময় এই হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
বাসদের এই সদস্য সচিব বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে সাম্প্রতিক সময়ে বিসিসি থেকে বরিশালে চলমান রিকশার লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে অন্যথায় রিকশা উচ্ছেদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে লাইসেন্স নবায়নের কোনো উদ্যোগ না থাকায় এই রিকশা চালকদের কয়েক বছরের নবায়ন ফি বকেয়া পড়ে গেছে। সিটি কর্পোরেশনের গাফলতির এই বকেয়ার দায়ভার কোনোভাবেই রিকশা শ্রমিকদের ওপর চাপানো ঠিক নয়। রিকশার লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে বিগত কয়েক বছরের সকল বকেয়া আদায়ে চাপ দেয়া হচ্ছে যা এই করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে অনেক রিকশাশ্রমিকের জন্যই দেয়া সম্ভব নয় এবং এটা বেশ অমানবিকও বটে। আমরা অবিলম্বে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে রিকশা-ইজিবাইক-হকার উচ্ছেদের এই ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একইসাথে আমরা করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে বকেয়া ফি মওকুফ করে রিকশাশ্রমিকদের লাইসেন্স নবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
এসময় তিনি ৩ দফা দাবিতে সমাবেশ ও মেয়র বরাবর স্মারকলিপি পেশসহ বাসদের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দাবিগুলো হলো, অবিলম্বে বরিশালে চলাচলের অযোগ্য সকল ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট-খাল-ড্রেন ও খাল সংস্কার করা, রিক্সা-ইজিবাইক ও হকার উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা, করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে বকেয়া ফি মওকুফ করে রিক্সাশ্রমিকদের লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বাসদ বরিশাল জেলা কমিটির আহবায়ক ইমরান হাবিব রুমন,বরিশাল রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন (২৩২৪) এর সভাপতি দুলাল মল্লিক, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, ভ্যান শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি মো. রফিক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।