ঢাকা: পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টমের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিলের পর দেশের প্রায় ৫০ লাখ পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে এবার কীভাবে মূল্যায়ন করে পরবর্তী শ্রেণিতে পাঠানো হবে।
আর এ দুই স্তরের পরীক্ষার বদলে শিক্ষার্থীদের কীভাবে মূল্যায়ন করা যায় তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে শিক্ষা বোর্ড এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
জেএসসি-জেএসসির বদলে অষ্টমের শিক্ষার্থীদের কীভাবে মূল্যায়ন করা যায়, তা নিয়ে শিক্ষা বোর্ডগুলোর সঙ্গে সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম আমিরুল ইসলাম।
আর পঞ্চমের প্রাথমিক এবং ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীর বদলে বিকল্প মূল্যায়ন নিয়ে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) একটি পরিমার্জিত পাঠ পরিকল্পনা পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে চলে আসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটিও আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। তবে গত ২৪ আগস্ট কওমি মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
জেএসসি-জেডিসির ‘মূল্যায়ন ইউনিক’
করোনা সংক্রমণের কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৭ আগস্ট চলতি বছরের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায়। ওই দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এক চিঠিতে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না নিয়ে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে নবম শ্রেণিতে উন্নীত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যাদের নির্দেশ দেয়।
পরদিন বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বোর্ড শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে নির্দেশনা দেয় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২০ সালের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না নিয়ে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে নবম শ্রেণিতে উন্নীত করা হবে। এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাসময়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
তবে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে নাকি অন্য কোনো পন্থায় এ মূল্যায়ন করা হবে তা এখনও ঠিক হয়নি।
অষ্টমের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি জানতে বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি আন্তঃবোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির সভাপতি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকগণকে ডেকেছি।
‘কোন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে, তাদের নিয়ে মিটিং করে ইউনিক ডিসিশন নেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহে এ সভা হবে। একেক বোর্ড একেক রকম না করে মূল্যায়ন উল্টাপাল্টা হয়ে যাবে। যাতে ইউনিক ডিসিশন নিতে পারি সেজন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের নিয়ে মিটিং করবো। ’
অন্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার মতো পরীক্ষা নিয়ে মূল্যায়ন হবে কিনা- প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেবো।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবছর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নেবে না। সমাপনীর বদলে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হলে কোন সময়ে হবে, করোনা পরিস্থিতির ওপর সব নির্ভর করছে। আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি, পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য। তবে শিক্ষার্থীদের তো হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া যাবে না।
পঞ্চম শ্রেণির জন্য প্রস্তাব জমা
করোনা সংক্রমণের কারণে এ বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না নিয়ে স্কুলে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সমাপনী পরীক্ষা না নিয়ে স্কুলে স্কুলে মূল্যায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব চেয়ে গত ১৯ আগস্ট সার-সংক্ষেপ পাঠায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২৫ আগস্ট তাতে সম্মতি এলে পঞ্চমের দুই সমাপনী এবছরের জন্য বাতিল করে স্কুলে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
ওই দিন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সমাপনীর বদলে কী করা যায় তা নিয়ে নেপের কাছে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি। তারা পাঠ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবে।
পরিমার্জিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন নেপের মহাপরিচালক মো. শাহ আলম।
তিনি বলেন, পরিমার্জিত পরিকল্পনায় আসন্ন ডিসেম্বরের শেষ ১০ দিন পরীক্ষার জন্য রাখা হয়েছে। প্রাথমিকের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী নিয়ে নেপের প্রস্তাব পাওয়া গেছে।
প্রাথমিকে ‘অটো পাস’ নিয়েও একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি না হলে স্কুল বন্ধ থাকলে পরীক্ষা না নিয়ে ‘অটো পাস’ দিয়ে পরবর্তী ক্লাসে পাঠানো হবে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সমাপনীর বদলে স্কুলে পরীক্ষা নিলে কীভাবে নেবো, তা নিয়ে কাজ করছি। অন্যান্য পরীক্ষাও তো স্কুলে নেবো- আমরা এসব নিয়ে আগামী সপ্তাহে বসবো।