স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী ঘটিত অভিযোগ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী ঘটিত অভিযোগ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত কোভিড কন্ট্রোল ইউনিটের যুগ্মসচিব এনসিডিসি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রিজওয়ানুল করিম শামীমের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তার কয়েক জন নারী সহকর্মী অভিযোগ করেছেন, নারী সহকর্মীদের উত্ত্যক্ত করাসহ সরকারি গাড়ির অপব্যবহার করেন তিনি অফিস রুমেই নারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এলেও সাবেক মহাপরিচালকের স্নেহভাজন হওয়ায় এত দিন কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে সাহস করেননি মহাপরিচালকের বিদায়ের পর এখন অনেকেই মুখ খুলছেন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন নারী কর্মকর্তা সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ কয়েক জায়গায় ডা. শামীমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এখনো আমি এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযোগপত্রে ওই নারী কর্মকর্তা বলেন, ‘২০০১ সালে ডা. শামীম ময়মনসিংহ মমতা ক্লিনিকে একজন রোগীকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় তিনি ১৭ দিন জেলও খেটেছেন। পরে রাজনৈতিক প্রভাবে ঐ রোগীকে আপস-মীমাংসা করতে বাধ্য করেন।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শামীম বলেন, ‘কোনো ধর্ষণের অভিযোগে নয়, রাজনৈতিক মামলায় আটক করা হয়েছিল। জেল খাটার অভিযোগও সত্য নয়। পরে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। জেল খাটতে হলে তো আমি ২০০৩ সালে বিসিএসে যোগদান করতে পারতাম না।’ প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের সাবেক ছাত্র ডা. শামীম ২১তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন।

ভুক্তভোগী ঐ নারী কর্মকর্তা আরো অভিযোগ করেন, ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নিপসমের শিক্ষক থাকার সময় দুই বার ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। পরে তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগদান করেন। এনসিডিসি প্রোগ্রামে সব সময় তিনি একাধিক নারী কর্মকর্তাকে যুক্ত করেছেন। সেখানেও নারী কর্মকর্তাদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ দুই মাস আগে সাবেক স্বাস্থ্য ডিজির অনুমতি নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত রুমে বসতে শুরু করেন এই কর্মকর্তা। সেখানে তার রুমেই একাধিক নারী কর্মকর্তাকে বসতে দেন। পরে তিনি প্রতিমন্ত্রীর চেয়ার দখল করে বসতে শুরু করেন। সেখানে অফিস রুমেই নারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠলে কর্তৃপক্ষ ঐ রুম থেকে নারী কর্মকর্তাদের বের করে দেয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) নাসিমা সুলতানা এ ব্যাপারে বলেন, ‘অফিস ম্যানেজমেন্ট করতে গিয়ে অনেক রুমেই অনেককে বসতে দিতে হয়েছে।’ ঐ রুম থেকে নারী কর্মকর্তাদের কেন বের করা হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নানা কারণে কর্মকর্তাদের বদলি করা হয় বা অফিস রুম পরিবর্তন করা হয়। এগুলো তারই অংশ। অন্য কোনো বিষয়ে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কয়েকজন নারী কর্মকর্তার অভিযোগ, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের এক কর্মকর্তার সঙ্গে গভীর সখ্য গড়ে ওঠে ডা. শামীমের। গত ১১ জুলাই ঐ কর্মকর্তা ডা. শামীমের রুমে ঢুকে অন্য এক জন নারী কর্মকর্তার সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান। ঐ সময় দুজনেই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করেন। তাদের চিত্কার-চেঁচামেচিতে আশপাশের কর্মকর্তারাও জড়ো হন। এর মধ্যে এনসিডিসির এক কর্মকর্তার সঙ্গে ডা. শামীমের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ঐ নারী কর্মকর্তা বিয়ের জন্য চাপ দিলে তাকে ঢাকার পাশের একটি জেলায় বদলি করে দেন।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. শামীম বলেন, ‘কখনো আমাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়নি। বদলি চাকরির অংশ। এছাড়া নারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাকে জড়িয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা একেবারেই ঠিক নয়। এমন কিছু ঘটে থাকলে অবশ্যই কেউ কেউ অভিযোগ করতেন। এ নিয়ে তদন্ত কমিটিও হতো। ব্যক্তিগত কারণে কেউ এই ধরনের অভিযোগ করে থাকতে পারে। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমার বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। কারো সঙ্গে অফিসে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের অভিযোগও সত্য নয়।’

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

তারেক রহমান-সালামের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা বাতিল

আ. লীগসহ ১১ দলের রাজনীতি নিয়ে রিট চালাবেন না সমন্বয়করা