ঢাকা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, চীনের সিনোভ্যাক নামে একটি কোম্পানির ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে সরকার৷ আইসিডিডিআরবির সহযোগিতায় এই ট্রায়াল হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য সেবায় জড়িত যারা স্বেচ্ছায় আসবে, সিনোভ্যাকের করোনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালে আগ্রহী হবে তাদেরকেই অনুমতি দেওয়া হবে। তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারির আগে দেশের বাজারে ভ্যাকসিন আসবে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে যেসব দেশ কাজ করছে সবার সঙ্গেই আলোচনা হয়েছে। চীন যেহেতু সবার আগে প্রপোজ করেছে, তাই তাদের ভ্যাকসিন সবার আগে ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। চীনের এই কোম্পানি যত দ্রুত শুরু করবে, আমরা তখনই ট্রায়াল শুরু করবো।
‘বাংলাদেশে চায়নার সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন ট্রায়াল করতে চায়। ১ লাখ ইউনিট ফ্রি দেবে চায়না। বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন পেতে অগ্রাধিকার দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে। যারা স্বেচ্ছায় আসবে তারা চায়নার সিনোভ্যাকের ট্রায়ালে অংশ নিতে পারবে৷’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যে ভ্যাকসিন আগে আসবে সে ভ্যাকসিন আগে গ্রহণ করা হবে। ট্রায়াল অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক যত পাওয়া যাবে তার উপর সংখ্যা নির্ধারিত হবে। ভারত অনুমতি চাইলে তাদেরও দেওয়া হবে।
ডিসেম্বর-জানুয়ারির আগে ভ্যাকসিন আসবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশা করছি আগামী বছরের মে-জুন নাগাদ সাধারণ মানুষ ভ্যাকসিন পাবে। বাংলাদেশের বেক্সিমকো, বিকনসহ দেশি কোম্পানিগুলো আগ্রহ দেখাচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীনাদের কাছ থেকেও আমরা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে কাজ করা তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের যে নাগরিকরা রয়েছেন, অ্যাম্বাসির লোকরা আছেন- তাদের উপরেও এই কোম্পানি ট্রায়াল করবে। আজকে এই বিষয়ে ডিটেইলড আলোচনা হয়েছে। আমরা এখন তাদের অফিসিয়ালি জানিয়ে দিচ্ছি যে, আপনারা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করুন। আমাদের মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ও আইসিডিডিআরবির সহযোগিতায় এই ট্রায়াল কার্যক্রম হবে। আজকে চীনের রাষ্ট্রদূতের (লি জিমিং) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে আমরা এই সিদ্ধান্তগুলো জানিয়েছি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন তার সরকার ও কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে এই কাজ যত দ্রুত শুরু করা যায় সেটা তারা করবেন। তারা আগে এটাও বলেছিলেন তারা এক লাখ ইউনিট ভ্যাকসিন ফ্রি দেবেন। ট্রায়াল কার্যক্রমে যে ব্যয় হবে সেটাও তারা বহন করবেন। আমরা বলেছি, আমাদের দেশে ট্রায়াল করার সুযোগ দেবো। তবে যখন বিক্রি করবেন তখন যেন প্রথম দিকে বাংলাদেশের নামটা থাকে। বাংলাদেশ যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিনটা পায়, এই কথাটির ওপর আমরা জোর দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী সেই কথার ওপর জোর দিয়েছেন।
জাহিদ মালেক বলেন, আমরা ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় থাকব। পাশাপাশি চেষ্টা করব যাতে আমাদের সংক্রমণের হারটা কমে আসে। ভ্যাকসিন আসতে একটু সময় লাগবে। আমরা যেসব দেশের সঙ্গে আলোচনা করলাম, ডিসেম্বর/জানুয়ারির আগে কোনো ভ্যাকসিন আসবে না।
সবাই মাস্ক পরলে করোনা সংক্রমণ কমে আসবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সীরা হচ্ছেন ৫০ শতাংশ, আর ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত ২৮ শতাংশ। আমরা এই মৃত্যু রোধ করতে চাচ্ছি। কোভিডকে প্রতিহত করতে চাচ্ছি, পৃথিবী চাচ্ছে বিভিন্নভাবে। এরমধ্যে অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে ভ্যাকসিন। আমরা জানি পৃথিবীর প্রায় ১৪০টি দেশ ও কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে এবং অনেকগুলো কোম্পানি আছে যারা অনেক অ্যাডভান্স স্টেজে আছে। ৫/৬টি কোস্পানি একেবারে থার্ড স্টেজে আছে।
চীনের যে দুটি প্রতিষ্ঠান করোনা ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালে যেতে পেরেছে তার একটি সিনোভ্যাক৷ বাংলাদেশে বড় আকারের পরীক্ষা চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। গত ১৯ জুলাই এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়ালের জন্য নৈতিক অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। এরপর আইসিডিডিআরবিতে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর কথা ছিল। এমনকি ঢাকার চীনা রাষ্ট্রদূত এই ট্রায়ালে টিকা গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি হতে চেয়েছিলেন৷