ঢাকা: বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে পথ দেখিয়েছেন, যে আদর্শ রেখে গেছেন সেই পথ ধরেই এগিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২৬ আগস্ট) ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এ কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির উত্থান ঘটেছিল। বিজয়কে নস্যাৎ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু সেই সুযোগ আর নেই। কারণ ইতিহাস নিজস্ব গতিতে চলে, ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে পথ দেখিয়েছেন, যে আদর্শ রেখে গেছেন সেই পথ ধরেই এগিয়ে যেতে হবে। অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে আমরা সে পথ ধরেই এগিয়ে যেতে চাই।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন ও ৬ দফা আন্দোলনের বিভিন্ন দিক তুল ধরে বক্তব্য রাখেন। ৬ দফার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ৬ দফা আন্দোলন এক পর্যায়ে এক দফা আন্দোলনে পরিণত হয়। এই ৬ দফার উপর ভিত্তি করেই মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় অর্জন। বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা লুফে নিয়েছিল। এত অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ কোনো বিষয়ে বুকের রক্ত দিতে পারে এটা ছিলো অভাবনীয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই ৬ দফা ছিল সম্পূর্ণ বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব চিন্তার ফসল। বঙ্গবন্ধু নিজে লিখতেন আর হানিফকে দিয়ে টাইপ করাতেন। একমাত্র হানিফ ছাড়া আর কেউ জানতো না। এই ৬ দফা নিয়ে তিনি যখনই আলোচনা করেছেন তখনই আমাদের জাতীয় পতাকা কী হবে, জাতীয় সংগীত কী হবে, জাতীয় স্লোগান কী হবে সেটা নিয়েও আলোচনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর এই ৬ দফার বিরুদ্ধে পাকিস্তানে তো ছিলই, এদেশেও দালাল তৈরি হয়। ৬ দফার পরিবর্তে ৮ দফা প্রস্তাব আনা হয়েছিল, তখন বঙ্গবন্ধু জেলে। কিন্তু আমার মা এ ব্যাপারে দৃঢ় ছিলেন। আমাদের বাড়িতে আওয়ামী লীগের মিটিং হয় সেখানে ৬ দফার পক্ষেই সিদ্ধান্ত হয়।
৬ দফা আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই ৬ দফা নিয়ে বঙ্গবন্ধু যে জেলাতে সভা করেছেন সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি যখনই এ দেশের মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন তখনই তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল বিচার করে ফাঁসির রায় দিয়ে তাকে হত্যা করা। ৬ দফা আন্দোলন এক দফা আন্দোলনে পরিণত হয়। আইয়ুব খান বাধ্য হয়ে মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়। মিলিটারির একটি গাড়িতে করে এনে ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। এই জাতিকে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। সেই পাকিস্তান ভেঙে এসে তিনি বাংলাদেশ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আমরা তার পথ অনুসরণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের প্রমুখ।
প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জনকারীকে ৩ লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীকে ২ লাখ এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ১ লাখ টাকার চেক ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।