জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত,

জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত,

বাগেরহাট: বাগেরহাটে গেল পাঁচ দিন ধরে অতি বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার শতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার।

ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় অনেকের রান্নাও বন্ধ রয়েছে। অনেক এলাকায় প্রবাহমান খাল আটকে চিংড়ি চাষ করার কারণে পানি না নামতে পারায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।

অবিরাম বৃষ্টির সঙ্গে প্রতিদিনই জোয়ারের পানিতে দুই বার ডুবছে বাগেরহাট জেলা শহরের নিম্ন এলাকা ও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভা এলাকা। অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পানিবন্দি এলাকার মানুষদের।

শনিবার (২২ আগস্ট) দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার চরগ্রাম এলাকা ঘুরে দেখা যায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। ওই এলাকার মানুষের মাছের ঘের, গোয়ালঘর, পুকুর ডুবে গেছে। একাকার হয়ে গেছে মাঠ ও লোকালয়। শুধু চরগ্রাম নয় সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা, ভদ্রপাড়াসহ অন্তত পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া, বহরবুনিয়া, জিউধরা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম, পৌর শহর, ঢুলিগাতি, তেলিগাতি, সানকিভাঙ্গাসহ অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে জনগণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে এসব এলাকার মৎস্য ঘের।

অবিরাম বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর, ভান্ডারকোলা, পদ্মনগর গ্রামের কিছু আংশিক প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামেও ভেসে গেছে মৎস্য ঘের।

রামপাল উপজেলার ভোজপাতিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে কয়েকশ মৎস্য ঘের। পানিবন্দি রয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। ফকিরহাট, চিতলমারী, মোল্লাহাট, মোংলা, ও শরণখোলা উপজেলায় অন্তত অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সবজি ও মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা।

বাগেরহাট সদর উপজেলার চরগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা তহিদুল ইসলাম বলেন, গত চার পাঁচদিন ধরে জোয়ারের পানির চাপে গ্রামরক্ষা বাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকেছে। আমার ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর ও গোয়ালঘর ডুবে গেছে।

নব্বই বছর বয়সী রাহিলা বেগম বলেন, পানিতে আমাদের ঘর আউলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে পানি উঠেছে। রান্না করতে পারছে না বউ।

আলেয়া বেগ, সালমা বেগম, বিলকিস, মরিয়ম, আব্দুস ছালামসহ চরগ্রামের কয়েকজন বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির চাপে অনেকের কাঁচা ঘরের মাটি ধসে পড়েছে। চার-পাঁচ দিন ধরে পানি উঠেছে ঘরের মধ্যে। চুলো ডুবে যাওয়ায় অনেকে রান্না করতে পারছে না। বিশুদ্ধ পানির অভাবে গোসলও করতে পারছিনা আমরা। অনেকেই রান্না না করতে পেরে শুকনো খাবার খেয়ে জীবন বাঁচাচ্ছেন। গবাদি পশু-পাখি নিয়ে মারাত্মক বিপাকে রয়েছি আমরা। গোয়াল ও খোপের ঘর ডুবে যাওয়ায় ঘরের মধ্যেও রাখতে হচ্ছে গরু ও হাঁস-মুরগি। গোখাদ্যেরও সংকট তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব পানি অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ঘষিয়াখালী গ্রামের নুরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান শেখ, মো. মাসুদ শিকদারসহ কয়েকজন বলেন, জোয়ারের পানিতে আমাদের ঘের, পুকুর, রাস্তা, বাড়ি, ঘর, গোয়ালঘর সবকিছু ডুবে গেছে। প্রত্যেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগেই আমাদের এভাবে ডুবতে হয়। কিন্তু এবারই প্রথম কোনো বন্যা ও আগাম সতর্কতামূলক জলোচ্ছ্বাস ছাড়া জোয়ারের পানিতে আমরা ভাসলাম। আমাদের ইউনিয়নের চারপাশে বেশ কয়েকটি নদী ও খাল রয়েছে। কিন্তু এখানে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। যদি বেড়িবাঁধ থাকত তাহলে প্রতিনিয়ত আমাদের ডুবতে হত না। এছাড়া খাল আটকিয়ে ও চলাচলের রাস্তা কেটে চিংড়ি ঘের করেছেন কিছু কিছু প্রভাবশালীরা। এর ফলেও আমাদের এলাকার জলাবদ্ধতা বেড়েছে কয়েকগুণ।

রামপাল উপজেলার ভোজপাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নুরুল আমিন বলেন, জোয়ারের পানিতে আমার ইউনিয়নের কয়েকশ মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। পানি উঠেছে মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভবনে।

তবে স্থানীয় জন সাধারণ এসব ক্ষয়ক্ষতি বিভিন্ন দুর্ভোগের দাবি করলেও মৎস্য, কৃষি, জেলা প্রশাসনসসহ কোনো দপ্তরই ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানাতে পারেনি।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে সেখান থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হবে বলে জানান তিনি।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন