কেজিডিসিএলে মধ্যরাতে ৫৭ জনকে পদোন্নতি 

কেজিডিসিএলে মধ্যরাতে ৫৭ জনকে পদোন্নতি 

 

চট্টগ্রাম: কিছুদিন আগেও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) করোনার অজুহাতে বেশিরভাগ কর্মকর্তা অফিসে আসতেন না। গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতেন বাসা থেকেই।

কিন্তু বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) ১০জন কর্মকর্তা রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কাজ করেছেন ৫৭জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে। শুধু তা-ই নয় পরদিন (শুক্রবার) সকালে আরও ৫ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে ৬২জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার অজুহাতে যেখানে গ্রাহক সেবা দিতে গড়িমসি করতেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা; সেখানে পদোন্নতি দিতে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কর্মকর্তারা কাজ করেছেন। এরমধ্যে পদোন্নতি দেওয়া কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে।

পদোন্নতি পাওয়া ৬২ জন কর্মকর্তার মধ্যে উপ-মহাব্যবস্থাপক (সাধারণ, অর্থ ও হিসাব, কারিগরি) পদে ১৭ জন, ব্যবস্থাপক (সাধারণ, অর্থ ও হিসাব, কারিগরি)পদে ৪০ জন ও উপ-ব্যবস্থাপক (সাধারণ ও কারিগরি ক্যাডারে) ৩ জন, উপসহকারী প্রকৌশলী হতে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত ২ জন। তবে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ বলছে, ৬২ জন নয় ৫৭ জন কর্মকর্তাকে তারা পদোন্নতি দিয়েছেন।

উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে ১৭ জন হলেন-মো. হাবিবুল গণি, মো. হাছান আলী সরকার, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আজিজুল হক, মো. কবির উদ্দিন আহম্মদ, মো. আবুল কাশেম হাওলাদার, প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহসান হাবীব, প্রকৌশলী মো. রফিক খান, প্রকৌশলী হাসান সোহরাব, নজরুল ইসলাম, একেএম সালেহ উদ্দিন, মো. শফিউল আজম খান, মো. শামসুল কবির, প্রকৌশলী মৌসুমী পাল, প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু জাহের, প্রকৌশলী মো. নাহিদ আলম ও প্রকৌশলী অনুপম দত্ত।

ব্যবস্থাপক পদে ৪০ জন হলেন- কামরুল ইসলাম চৌধুরী, মোহাম্মদ আবু শাহেদ চৌধুরী, সৈয়দ মোনাব্বর হোসেন, মো. মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, চন্দনময় নন্দী, হালিম উম্মে হিন্দিয়া, মো. ফারুক হোসেন, মৃদুল কান্তি ঘোষ, সালাহউদ্দিন মাসুদ, মো. বেলাল উদ্দিন, মো. সোহেল মৃধা, মো. আশরাফ আলী, মো. মনজুর রহমান, সুলতান আহম্মেদ, মো. আব্দুল আজিজ, মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী, বাসুদেব বিশ্বাস, বসির আহাম্মদ ভূইয়া, পলাশ রায় চৌধুরী, মো. ইয়াকুব আলী, মনোরঞ্জন দাশ, মো. রফিকুল ইসলাম, শেখ ফরিদ, আবুল কালাম আজাদ, প্রকৌশলী মুহাম্মদ রিফাত নওশাদ ভূইয়া, প্রকৌশলী মো. কাওছার, প্রকৌশলী মো. বদিউল আলম, প্রকৌশলী ওয়াছিউর রহমান, প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু হানিফ, প্রকৌশলী এস বি এম রেজাউল করিম, প্রকৌশলী মো. শহিদুর রহমান, প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন, প্রকৌশলী ফ.ম নিজাম উদ্দীন খাঁন, প্রকৌশলী প্রজিত বড়ুয়া, একেএম ওবায়ুদুর রহমান খান চৌধুরী, অপূর্ব কুমার বনিক, প্রকৌশলী মো. আশেক উল্লাহ চৌধুরী, প্রকৌশলী শাপলা দেওয়ানজী, প্রকৌশলী ফারুক আহম্মেদ।

উপ-ব্যবস্থাপক (সাধারণ ও কারিগরি ক্যাডারে) ৩ জন হলেন- মো. মনির হোসেন, রফিউজ্জামান ও মো. কামরুল ইসলাম। এছাড়া উপসহকারী প্রকৌশলী হতে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ২ জন হলেন- মিটুন দাস ও নাজমুল আলম।

ব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি পাওয়া ৪০ জনের মধ্যে ১১জনের নিয়োগ হয়েছিল ২০১১ সালে ও ২০১২ সালে। তারা সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ পান। এরমধ্যে কিছু কর্মকর্তাকে দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ওই দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন পেট্রোবাংলার জিএম (প্রশাসন) আয়ুব খান চৌধুরী। তার সময়ে ২০১১ সালের নিয়োগটি ২০১০ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হয়। কমিটির সদস্য থাকাকালীন তিনি তার ছেলেকে নিয়োগ দেন। নিয়োগে অনুমোদিত পদ ছিলো ২০টি কিন্তু নিয়োগ দেওয়া হয় ৩২ জনকে। পরে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আরও ৬ জনকে ২০১২ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বমোট ৩৮ জনের মধ্যে একজন ২০১৫ সালে চাকরি ছেড়ে চলে যান। বাকি ৩৭ জনের মধ্যে ১১ জন বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার নিয়োগ পাওয়া ৬২ জনের মধ্যে পদোন্নতি পান। এর আগেও তারা পদোন্নতি পেয়েছিলেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) ও পদোন্নতি কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, ৬২ জন নয়, ৫৭ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পদোন্নতিতে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি।

তিনি বলেন, পদোন্নতিতে দুটি গ্রুপের মধ্যে একটি সিনিয়র সিলেকশন কমিটি আরেকটি সুপিরিয়র সিলেকশন কমিটি। সুপিরিয়র সিলেকশন কমিটির মধ্যে ডেপুটি ম্যানেজার থেকে ম্যানেজার আর ম্যানেজার থেকে ডিজিএম হবে। সিনিয়র সিলেকশন কমিটির মধ্যে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার থেকে ডেপুটি ম্যানেজার আর অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার।

‘এ দুটি গ্রুপ কমিটির মধ্যে মন্ত্রণালয়ের একজন ডেপুটি সেক্রেটারি, বিজিএমসির একজন জিএম, পেট্রোবাংলার জিএম ও অ্যাডমিন, পেট্রোবাংলার ৩টি ক্যাডারের ৩ জন জিএম, বাখরাবাদের ৩টি ক্যাডারের ৩ জনসহ প্রায় ১০ জনের উপস্থিতিতে এ পদোন্নতি হয়। তারা সার্টিফিকেট, যোগ্যতা, দুদকের ক্লিয়ারেন্সসহ সবকিছু দেখে স্বাক্ষর করেছেন। ’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনার সময়ে আমরা ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছি। এর আগেও মধ্যরাতে পদোন্নতি হয়েছে। মূলত পদোন্নতি দিলে একদল লোক আদালতে মামলা করে। এ জন্য আমরা যেদিন স্বাক্ষর, ওইদিনই পদোন্নতি দিয়েছি। যাতে পদোন্নতি কেউ আটকাতে না পারে।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

ফ্যাসিবাদের কারখানা ছিল মাদারীপুর: নাছির উদ্দিন নাছির

মাদকের টাকার জন্য মা’কে হত্যা: নিজেই পুলিশের হাতে ধরা দিলেন ছেলে