অন্য স্তরের মতো প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধেরও পাঁচ মাস অতিক্রম করছে। কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এ অবস্থায় যখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় একটি গাইডলাইন তৈরি করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে একদিন অর্ধেক শিক্ষার্থী, আরেকদিন বাকি অর্ধেক শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস পরিচালনার কথা ভাবা হচ্ছে।
শিশু শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার আগে, খোলা অবস্থায় নিরাপত্তা ও পাঠদান সময়ে শিক্ষার্থীদেরে উপসর্গ বা আক্রান্ত হলে করণীয় কী- এসব উঠে এসেছে সেই গাইডলাইনে। এছাড়াও রয়েছে পাঠ পরিকল্পনার কথা। এ নিয়ে মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সভা হয়েছে।
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার ঘোষণা এলে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয় এই গাইডলাইন তৈরি করছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে সচিব বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার নির্দেশিকা’ (প্রস্তাবিত নাম) নিয়ে জানান মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয় শাখার অতিরিক্ত সচিব আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম।
করোনা পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় কখন খুলবে তা সরকারের শীর্ষ মহল ব্যবস্থা নেবে বলেও ওই নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে ক্লাস শুরুর ১৫ দিন আগেই স্কুল শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য স্কুল খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কোনো কোনো বিদ্যালয় অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা হতে পারে। ১৫ দিন আগে খুলে দেওয়া হবে শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য যাতে তারা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে পারেন।
শিক্ষার্থীর সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব
তিনি বলেন, স্কুলে প্রবেশের আগে সাবান-পানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। আর মাস্ক ব্যবহার করলে একজন থেকে আরেকজনে ছড়াবে না, সেজন্য সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। আর শিক্ষার্থীসহ সবার তাপমাত্রা মেপে স্কুলে ঢুকতে হবে।
শিক্ষার্থীরা মাস্ক নিজের ব্যবস্থাপনায় এবং হাত ধোয়ার বিষয়টি স্কুলের বার্ষিক যে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয় সেখান থেকে ব্যয় করবে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব মনসুর আলম।
তিনি বলেন, আমরা স্যানিটাইজার-গ্লোভসের কথাও বলছি, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। যাদের সামর্থ্য আছে তারা এসব ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ পরিষ্কার করতে হবে।
যেসব স্কুলে টিউবওয়েল বা পানির ব্যবস্থা নেই সেখানে সেই ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছ। স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা না করতে পারলে ক্ষণস্থায়ীভাবে ড্রাম বসানোর কথা বলেছি।
পাঠ পরিকল্পনা
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আগের মতো পাঠ পরিকল্পনা থাকবে না জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব মনসুর বলেন, ক্লাস নেওয়ার বিভিন্ন ফরমেট দেওয়া হয়েছে। হয়তো একদিন অর্ধেক আরেক দিন বাকি অর্ধেক শিক্ষার্থীর ক্লাস নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিন ফুট দূরত্বে বসা নিশ্চিত করে ক্লাস নেওয়া হবে। এসব বিষয় স্কুল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ঠিক করে নেবে।
তিনি বলেন, ক্লাসে বাচ্চা কম বেশি হলে কোন দিন কোন ক্লাস, কোন দিন কোন শ্রেণির ক্লাস- এসব তারাই ঠিক করবেন। তবে আমরা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি, কারণ তারা পরের ক্লাসে উঠবে।
হঠাৎ উপসর্গ দেখা দিলে
স্কুলে থাকা শিক্ষার্থীর হঠাৎ করে করোনার উপসর্গ দেখা গেলে স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে বিদ্যালয় শাখার অতিরিক্ত সচিব বলেন, পাশাপাশি জরুরি সেবার মোবাইল নম্বর ঝুলিয়ে রাখা হবে। উপজেলা পর্যায়ে ইনফরমেশন সেন্টারও থাকবে।
সভায় জানানো হয়, করোনা সংক্রমণের উপর স্কুলে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা নির্ভর করবে। রেড জোনে স্কুল খুলবে না, স্কুল খোলা থাকা অবস্থায় রেড জোন ঘোষণা করা হলে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হবে; সেকথাও উল্লেখ রয়েছে নির্দেশিকায়।
স্কুল খোলার পর করণীয় বিষয়ে নির্দেশিকাটি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, আর দু’একটি সভা করে একেবারে চূড়ান্ত করবো। এখনও যেহেতু স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি তাই বিস্তারিত প্রকাশ করছি না।
বিষয়গুলো বাস্তবায়নে মনিটরিংয়ের উপর জোর দিয়েছি জানিয়ে তিনি বলেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন দেখবে।
তবে স্কুল খোলার বিষয়টি চূড়ান্ত হলে নির্দেশিকাটি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব মনসুর।
বিদ্যালয়ে অবস্থানকালে করণীয় ছাড়াও মাস্ক কীভাবে পরতে হবে, হাত কীভাবে ধুতে হবে, স্যানিটাইজার কীভাবে ব্যবহার করতে হবে- এগুলো ভিডিও তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়াসহ টিভি-পত্রিকায় প্রচার করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নিরাপদ বিদ্যালয় করতে যা যা করা দরকার তা করবো।
এই নির্দেশিকাটি ন্যাশনাল স্ট্যার্ডার্ড অর্থাৎ স্বাস্থ্যবিধি, প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সিডিসির সবশেষ গাইডলাইন অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম।