সিনহা হত্যার তদন্ত শেষ পর্যায়ে, ২৩ আগস্টের আগে প্রতিবেদন

সিনহা হত্যার তদন্ত শেষ পর্যায়ে, ২৩ আগস্টের আগে প্রতিবেদন

 

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের খুনের ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের গঠন করা তদন্ত কমিটি আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। রবিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গণশুনানি শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান।

গণশুনানীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালেয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. মিজানুর রহমান ছাড়াও চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন, কক্সবাজারের এডিএম মোহা. শাজাহান আলি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ এবং সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, তদন্তের স্বার্থে আজ (রবিবার) গণশুনানি করেছি। এতে ১১জন সাক্ষ্য দিতে নাম নিবন্ধন করলেও আমরা নয়জনের কাছ থেকে স্বাক্ষ্য নিয়েছি। অন্য দু’জনের কথায় তাদের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে মনে হয়নি।

মিজানুর রহমান বলেন, সিনহা হত্যার পর ৩ আগস্ট আমরা তদন্তের দায়িত্ব পাই। আমাদের সময় বেঁধে দেওয়া হয় সাত কর্মদিবস। মেন্ডেট দেওয়া হয়েছিল এ ঘটনার উৎস, কারণ বের করা এবং এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যৎ যাতে আর না ঘটে এ জন্য কি করনীয় ঠিক করে সুপারিশ করা।

তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকটা জায়গায় গিয়েছি। মানচিত্র তৈরি করেছি। ঘটনা যেখানে থেকে সূত্রপাত সে মারিশবনিয়া পাহাড় থেকে হত্যার ঘটনাস্থল তিনবার পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারাই ছিল- টেকনাফ থানার পুলিশ, তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ, আর্ম ব্যাটালিয়ন পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী এবং ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন ও সেইসব গাড়ির চালক, ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার, সুরতাল তৈরিকারী পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোটামুটি প্রায় ৬০ জনের মত ব্যক্তিকে জিঙ্গাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দিয়ে তাদের কাছে থাকা ডকুমেন্ট যোগাড় করেছি এবং তা পর্যালোচনা করেছি।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, আজকে আমরা প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের বক্তব্য নিতে ঘটনাস্থলের পাশে সরকারি স্থাপনা বেছে নিয়ে সেখানে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য গ্রহণ করেছি। এরই মধ্যদিয়ে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমাদের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেয়া আছে। আশা করছি সে সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের প্রতিবেদন জমা দিতে পারব। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ৯টা হতে গণশুনানি স্থলে আসা শুরু করেন সবাই। বক্তব্য দিতে আগ্রহীরা নাম রেজিস্ট্রেশন বুথে যান। গণশুনানি উপলক্ষে মেরিন ড্রাইভের শাপলাপুর এলাকা, ক্যাম্পস্থল এবং আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে সেনাবাহিনী ও অন্য শৃংখলাবাহিনী। বিপুল পরিমাণ গণমাধ্যমকর্মীও আসেন ঘটনাস্থলে। আশপাশে তাদের যাতায়ত অবাধ থাকলেও শুনানি কক্ষে গণমাধ্যমের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বৃষ্টি উপক্ষো করে হাজারও লোকজন শুনানিস্থল এবং আশপাশে ভিড় জমান।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের মতে, সিনহা হত্যাকান্ডে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করছেন তারা। এর মধ্যে এ হত্যাকান্ড পরিকল্পিত, নাকি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটেছে, কার নির্দেশে সিনহাকে গুলি করেছিলেন লিয়াকত, ঘটনার সময় আদৌ সিনহার হাতে অস্ত্র ছিল কি না, এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের মতে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় এসব প্রশ্নের জবাব মিলছে কিনা তা খতিয়ে দেয়া হচ্ছে।

সূত্রে মতে, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে ফোন করে বলেছিলেন, তিনি সিনহাকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু গুলি করার আগে লিয়াকত, ওসি না অন্য কারও কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে আরও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে তদন্তকারী দল।

সিনহার সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাত পুলিশকে বলেছিলেন, গাড়ি থেকে নামার সময় সিনহার অস্ত্র হাতে ছিল কি না, তা তিনি দেখেননি। কিন্তু পুলিশের করা মামলায় বলা হয়েছে, গাড়ি থেকে নেমে কোমরের ডান পাশ থেকে পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হন সিনহা। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্তে সবকিছু পরিষ্কার হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন (অব.) সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরির্দশক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আর মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয়েছে র‌্যাবকে। ইতিমধ্যে মামলার নতুন আইও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসামীদের রিমান্ডেও নিয়েছেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সন্দ্বীপে মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা

বাংলাদেশ ইসকন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, বিতর্কিত মৎস্য কর্মকর্তাকে বদলি