পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) স্টেট অ্যান্ড ওয়েল ফেয়ার বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা হয়েছে। বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দিদার হোসেনের আদালতে ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা ওরফে আদর মামলাটি করেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী সালাউদ্দিন সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বিজ্ঞ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, বাদী তার আর্জিতে এসপি বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
আর্জির অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাদীর নিকটাত্মীয় ড. জাবেদ পাটোয়ারীর অফিসে দুই বছর আগে বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সুবাদে বাদীর সঙ্গে এসপি বেলায়েত হোসেনের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বাদীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অর্থের প্রতি এসপি বেলায়েত হোসেনের কুনজর পড়ে। ২০১৯ সালের ১১ আগস্ট বাদীর বাবা, তার (বাদী) কাছ থেকে নিয়ে বেলায়েত হোসেনকে ৫ লাখ টাকা ঋণ দেন। পরে ঋণের টাকা বেলায়েত হোসেন চেকের মাধ্যমে ফেরতও দেন। ২০২০ সালের ৪ এপ্রিল বেলায়েত হোসেন বাদীর বাবাকে ফোন করে বলেন, ৫ লাখ টাকা না দিলে তার ছেলের (বাদী) অসুবিধা হবে। পরে বাদীর বাবা ৫ লাখ টাকার একটি চেক এসপি বেলায়েত হোসেনকে দেন। ১০ এপ্রিল বাদীর বাবা ও সাক্ষী পরষ্পরের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ব্ল্যাকমেইল করে চেকটি আসামি বেলায়েত হোসেন নিয়েছেন। এরপর গত ৮ আগস্ট এসপি বেলায়েত হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫/১৬ জন ডিবি নামধারী ব্যক্তি নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাদীর বাসায় প্রবেশ করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হবে এবং নারায়ণগঞ্জের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে জরিমানাসহ জেলে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, এ অবস্থায় বাদী কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন এবং বারবার আসামি এসপি বেলায়েত হোসেনকে বলেন, ‘আপনি আমাদের কাছের লোক, এসব কী বলছেন?’ তখন আসামি বেলায়েত হোসেন অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং টাকা দিতে না পারায় মারপিট করে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করে অন্যায় ও বেআইনিভাবে মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে বাদীকে ২৫ লাখ টাকা দিতে বলেন। নতুবা ক্রসফায়ার অথবা ফেনসিডিলসহ অস্ত্র দিয়ে মামলা দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন। তখন বাদী সাড়ে তিন লাখ টাকা আসামি বেলায়েত হোসেনের হাতে তুলে দেন এবং ১০ আগস্ট আরও ৫০ হাজার টাকা দেন। আসামির সঙ্গে ১৫ লাখ টাকায় রফাদফা করে বাদীর বাবা ৫ লাখ টাকার চেক দিয়ে সমন্বয় করেন। আরো ৬ লাখ টাকা সাত দিনের মধ্যে দিতে বলেন। তা না হলে বাদীর ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন এসপি বেলায়েত হোসেন।
এ ব্যাপারে মতামতের জন্য রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের এসপি স্টেট অ্যান্ড ওয়েল ফেয়ার বেলায়েত হোসেনের বক্তব্যের জন্য তার সরকারি নম্বরে অসংখ্যবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। জানতে চাইলে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলার কথা শুনেছেন। বিস্তারিত জানেন না, কাগজপত্র না পেলে তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন না বলে জানান।