জয়পুরহাট প্রতিনিধি
জামা-আতুল মুজাহেদীন (জেএমবি) পুলিশের অস্ত্র লুট ও পুলিশকে মারপিট করে গুরুতর জখম এবং হত্যা চেষ্টার মামলাটি ১৭ বছর আগে দায়ের করা হলেও বিচার কাজ শুরু হয়নি এ মামলার। এ মামলার শীর্ষ ১৩ জেএমবি সদস্য জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছে। পলাতকরা ১৪ বছরে গ্রেপ্তার হয়নি।
মামলার পলাতক আসামিরা হলেন, সাইফুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদুল্লাহ, মামুনুর রশিদ, সারোয়ার জাহান, সালাউদ্দীন ওরফে সালেহীন, শহিদুল্লাহ ওরফে ফারুক, আবুল কাশেম ওরফে তুফান, আব্দুল কুদ্দুস, আরিফুর রহমান ওরফে আসাদুল্লাহ, তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক, জাহাঙ্গীর আলম ও আনোয়র হোসেন ওরফে খোকা। এই মামলায় জেলা কারাগারে রয়েছেন, মন্তেজার রহমান, গোলাম মোস্তফা, আনোয়ার সাদাত, আব্দুর রাজ্জাক, আজিজুল বারী, গোলাম মোস্তফা, ইউনুস আলী ও ময়নুল হোসেন।
মামলায় জামিনে মুক্ত রয়েছেন ৩৮ জন আসামি। মামলাটি বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট গভীর রাতে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার উত্তর মহেশপুর গ্রামে জেএমবি নেতা মন্তেজার রহমানের বাড়িতে দেশের শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গি নেতাদের নিয়ে গোপন বৈঠক চলছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জয়পুরহাট সদর থানা পুলিশ ওই বাড়িটি ঘেরাও করে। এ সময় জেএমবি সদস্যরা হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করে পুলিশকে। পুলিশের তিনটি শর্টগান, ৪৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলি একটি ওয়াকিটকি লুট করে নিয়ে যায়। তৎকালীন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল শফিসহ ছয় পুলিশ গুরুতর জখম হন।
এ ঘটনায় জয়পুরহাট সদর থানার এসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ২০০৩ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষেতলাল থানায় ৩৩ জনকে এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাত আরো ৭০ জনকে আসামি করে। ঘটনার সময় গ্রেপ্তার হন ১৮ জন জেএমবি সদস্য।
মামলাটির তদন্ত করেন দিনাজপুর জোনের সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক জালাল উদ্দীন। তিনি মামলাটি তদন্ত করে অস্ত্র ছিনতাই, হত্যা চেষ্টা, মারপিট, পুলিশের সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে ৬০ জন আসামির বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ না পাওয়ায় তাঁকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন।
এ দিকে ওই ঘটনার সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করলেও অস্ত্র এবং বিস্ফোরক আইনে কোন মামলা দায়ের না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ২০০৯ সালের ১২ জুলাই মামলাটি পুনঃতদন্তের আবেদন করেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মামলাটি পুনরায় তদন্ত করার জন্য দিনাজপুর জোনের সিআইডি পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দিনাজপুর জোনের সহকারী পুলিশ সুপার আহসান উল-কবীর মামলাটি তদন্ত করে ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল পূর্বের ওই ৬০ জন আসামির বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলা চলাকালে এক আসামি মৃত্যুবরণ করেন।
বাকি ৫৯ জন আসামির মধ্যে ১৩ জন আসামি ২০০৬ সালে বিভিন্ন সময়ে জামিনে গিয়ে পলাতক থাকে। আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এ মামলায় আটজন আসামি কারাগারে রয়েছে। ৩৮ জন জামিনে মুক্ত রয়েছে।
দীর্ঘ দিনেও মামলার বিচার কাজ শুরু না হওয়া প্রসঙ্গে সরকারী কৌঁসুলি (পিপি) নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, কারাগারে থাকা আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা থাকায় তাঁদেরকে জয়পুরহাটের আদালতে মামলার নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত করতে না পারা এবং কোন কোন ধার্য তারিখে জামিনে থাকা আসামির পক্ষেও সময়ের প্রার্থনা থাকায় মামলা বিলম্বিত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পলাতক আসামিদের স্থায়ী ঠিকানার স্ব স্ব থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আদালত মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের দায়িত্ব তাদের গ্রেপ্তার করা।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ”অভিযোগ গঠনের ধার্য তারিখে হাজতে থাকা এবং জামিনে থাকা সকল আসামি আদালতে উপস্থিত না থাকার কারণে আদালত অভিযোগ গঠন করতে পারছেন না। জেল হাজতে থাকা আসামিদের আদালতে উপস্থিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষের”।