নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা সংকটে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনার ঋণ দিয়েই সরকারের কাছে সুদ ভর্তুকির টাকা দাবি করছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এরই মধ্যে সরকারি- বেসরকারি মিলিয়ে ৯টি ব্যাংক এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত প্রদেয় ঋণের বিপরীতে তিন মাসের সুদ ভর্তুকি হিসেবে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা দাবি করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, এপ্রিল-জুন মেয়াদে (তিন মাসের) সুদ ভর্তুকি বাবদ ব্যাংকগুলো যে অর্থ দাবি করেছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকির অর্থ পরিশোধের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। জানা গেছে, যে ৯টি ব্যাংক সুদ ভর্তুকির টাকা দাবি করছে, তার মধ্যে ২টি সরকার মালিকানাধীন এবং বাকি ৭টি বেসরকারি ব্যাংক। সাড়ে ৪ শতাংশ হারে সরকারি দুই ব্যাংকের সুদ ভর্তুকি বাবদ অর্থের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সূত্রগুলো জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার বেশ কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এর মধ্যে গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, তাদের সার্কুলার অনুযায়ী এ প্যাকেজের আওতায় ৯ শতাংশ সুদ ধার্য করা হয়েছে, যার বিপরীতে ৪.৫ শতাংশ সুদ ভর্র্তুকি দেবে সরকার। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন সেই সুদ ভর্তুকির টাকাই দাবি করছে।
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম জানান, প্রণোদনা ঋণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা মেনেই তারা সুদ ভর্তুকির অর্থ পরিশোধের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, সুদ ভর্তুকি বাবদ বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। বাজেটের টাকা কিস্তিতে নেওয়াই ভালো। বছর শেষে এককালীন তুলতে গেলে পরে সমস্যা তৈরি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে অর্থবছর পেরিয়ে গেলে আবার বাজেটের টাকাও ফেরত চলে যায়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো জানায়, সুদ ভর্তুকির অর্থ পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি তারা পেয়েছেন। এ বিষয়ে বাজেটে বরাদ্দও রয়েছে। এখন প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুকূলে সুদ ভর্তুকির অর্থ ছাড় করা হবে। জানা গেছে, করোনার প্রভাব মোকাবিলা করতে ব্যাংক ঋণের সুদ বাবদ ভর্তুকি দিতে বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ টাকা ঋণ পর্যন্ত সব ধরনের সুদ মওকুফ করা হয়েছে। যেটি সরকারের বাজেট বরাদ্দ থেকে পরিশোধ করার কথা। এ ছাড়াও করোনার প্রভাব মোকাবিলা করতে শিল্প ও সেবা খাতে চলতি মূলধনের জোগান দিতে যে ৩০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে, এ খাতে সরকার সাড়ে ৪ শতাংশ হারে সুদ ভর্তুকি দেবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য আরও ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিল ঘোষণা করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫ শতাংশ সুদ ভর্তুকি দেবে সরকার।