যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের মামলা প্রত্যাখ্যাত হলে আশ্রয়প্রার্থী আদালতের শরণাপন্ন হতে পারতেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সে সুযোগ সীমিত করে দিয়েছে। দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার সুযোগও কঠিন এখন। আগে ইমিগ্রেশন অফিসার কর্তৃক রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাখ্যাত হলে আদালতে আপিল করা যেত এবং তা নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময় লাগত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিষ্পত্তি হতে এক দশকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার নজির রয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের মামলা পুনরুজ্জীবিত হওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ইত্তেফাককে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের প্রধান অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের ফাইল তলব করেছেন। প্রায় ১৫ বছর পর এ ধরনের ফাইল তলবের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। তিনি রাশেদ চৌধুরীর মামলা পুনরুজ্জীবিত হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ১৭ জুলাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে তাদের প্রতিক্রিয়া জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু বিষয় বিচেনায় নিয়ে, বিশেষ করে দীর্ঘ সময় পর মামলা পুনরুজ্জীবিত হলে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা আছে কি না, পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো ভুলত্রুটি রয়েছে কি না, সেজন্য ‘এক্সট্রা উইনডো’ ওপেন করা হয়েছে।
ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে আরো জানান, ৩১ জুলাই মামলা পুনরুজ্জীবিত হওার পর সব নথিপত্র বোর্ড অব ইমিগ্রেশন (বিআইএ) এবং সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন জজের কাছে পাঠানো হবে। বাংলাদেশ সরকারের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে এই মামলার অধিকতর তদন্ত হবে। কারণ, রাশেদ চৌধুরী তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন। ঊর্ধ্বতন সেনা অফিসারদের নির্দেশে তিনি রেডিও সিগন্যালের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি জানতেন না যে, প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হবে। তবে তিনি জানতেন যে সেদিন ক্যু হবে। এর স্বপক্ষে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মিথ্যা প্রমাণপত্র দাখিল করেন এবং পরে তার রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারে রাশেদ চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়। বিবাদী পক্ষের জবানিতেও বেরিয়ে আসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাশেদ চৌধুরী সরাসরি জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক আশ্রয় লাভে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হবে। এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে এক থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে। তবে প্রশাসন চাইলে আরো দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে। সবকিছু নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সদিচ্ছার ওপর।
রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী সেক্রামেন্টো থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরের শহর কনকর্ডের হ্যাকলবেরি ড্রাইভে বসবাস করতেন। তবে দীর্ঘদিন তাকে জনসম্মুখে দেখা যাচ্ছে না। এর আগে ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, ইলিনয় এবং মিজৌরিসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে বসবাস করেছেন তিনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাশেদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। হত্যাকাণ্ডের ২৩ বছর পরে ১৯৯৮ সালে নিম্ন আদালতের রায়ে অন্য আসামিদের সঙ্গে পলাতক অবস্থায় তাকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত ১২ জন কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। ফাসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছয়জনের রায় কার্যকর হলেও রাশেদ চৌধুরীসহ বিদেশে পলাতক অন্যদের দণ্ড কার্যকর হয়নি। এসব ঘাতককে বিদেশ থেকে দেশে নিয়ে এসে দণ্ড কার্যকর করার জোরালো দাবি জানানো হচ্ছিল।
রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বারবার আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর এই বিচারের কাগজপত্র চায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের ফাইল তলব করল যুক্তরাষ্ট্রের আদালত।