নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) গত জুলাইয়ে সংঘটিত আন্দোলনের ঘটনায় দীর্ঘ তদন্ত শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের হুমকি প্রদান, বাধাদান ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় দুই শিক্ষক, এক কর্মকর্তা এবং ১৩ শিক্ষার্থীকে শাস্তি প্রদানের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
গত জুলাইয়ে একাধিক একাডেমিক ও প্রশাসনিক দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ছাত্রসংগঠন নেতাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বাধাগ্রস্ত করার ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এবছর ১৬ এপ্রিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাবিব-উল-মাওলাকে আহ্বায়ক এবং প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমানকে সদস্য সচিব করে একটি ১০ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।কমিটি তিন মাস ধরে আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থী ও ক্ষতিগ্রস্তদের সাক্ষ্যগ্রহণ, ভিডিও ফুটেজ এবং নথি সংগ্রহের মাধ্যমে অনুসন্ধান চালায়।
তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের উল্লেখযোগ্য অংশ সত্য প্রমাণিত হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, আচরণবিধি ও পূর্ববর্তী দৃষ্টান্ত বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পৃথক শাস্তির সুপারিশ করে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় এই সুপারিশসমূহ আলোচনা শেষে সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শাস্তি প্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের সাবেক পরিচালক ড. মো. মেহেদী উল্লাহ এবং সাবেক রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর। তাদেরকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আল মাহমুদ কায়েস, সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদুল ইসলাম রিয়েল সহ থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের আনাস সরকার, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের জুবায়ের আহমেদ সাব্বির (অ্যালেক্স সাব্বির), সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. ইনজামামুল হাসান, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের কে এম রাজু, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মোছা. তৃণা মির্জা, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের রিয়াজ উদ্দিন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নাইম আহমেদ দুর্জয়, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের হাসিব সিদ্দিকী ও তাসনীমুল মুবীন, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মো. মোস্তাকিম মিয়া এবং দর্শন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মো. পারভেজ মাতুব্বর।
সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা অধ্যয়নরত রয়েছেন তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। আর যারা অধ্যয়নরত নন, তাদের ক্ষেত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সনদ বাতিল করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শৃঙ্খলা ও শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু শিক্ষাপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েছে।