আনাছুল হক, কক্সবাজার:: বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত হচ্ছে গভীর নিম্নচাপ। ক্রমেই সেটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে উপকূলে ধেয়ে আসছে । আর তারই জেরে উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
তবে এটি কক্সবাজার উপকূলে সরাসরি আঘান না করলেও নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে ঝড়ে পরিণত হলে সংকেত বাড়তে পারে।
আর এটি কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৬০ কিলোমিটার দূরে আছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঝড়ের গতিপথ এখন পর্যন্ত ভারতের দিকে রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘ডানা’। এই নামটি দিয়েছে কাতার। ‘ডানা’ নামের অর্থ মুক্ত বা স্বাধীনতা।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আবহাওয়ার ২ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নিম্নচাপ গভীর নিম্নচাপে পরিনত হয়েছে। পূর্ব পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে রয়েছে এই নিম্নচাপ। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে মাত্র ৬৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে নিম্নচাপটি।
এটি আঘাত হানার পর এই ঝড়টি ভয়াবহ রূপ নেবে। উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে। যার গতিবেগ স্থলভাগে ১৪০ কিমি/ঘণ্টা হতে পারে বলেও আশঙ্কা। ঘরবাড়ি ও চাষের জমিতে প্রবল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়— পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও উত্তর আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
এটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয় যেতে পারে।
আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম জানান, নিম্নচাপটি আরও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে সংকেত বাড়বে। আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার সকাল নাগাদ এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ফলে উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত ঝড়ের গতিপথ ভারতের দিকেই বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় গণমাধ্যমে সেখানকার আবহাওয়া অফিসের বরাতে বলা হচ্ছে, আগামীকাল ২৩ অক্টোবর পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ তৈরি হতে পারে এবং পরদিন ২৪ অক্টোবর সকালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।