এস এম মঈন উদ্দীন: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব মেট্রোপলিটন এলাকার বাসে ছাত্রদের ‘হাফ ভাড়া’ সপ্তাহে ৭ দিন কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম।
তিনি বলেন, ছাত্রদের হাত ধরেই ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৭১ এর স্বাধীনতা এবং ২০২৪ সালে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে। দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে। ছাত্রদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল, সপ্তাহে ৭ দিনই ছাত্রদের বাস ভাড়া ৫০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে সপ্তাহে ৭ দিন ‘হাফ ভাড়া’ কার্যকর হবে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক সেমিনারে তিনি এই ঘোষণা দেন।
আমাদের অঙ্গীকার-নিরাপদ সড়ক হউক সবার : সড়ক-মহাসড়কে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মালিক ও শ্রমিকদের সচেতনতামূলক শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
সেমিনারে সাইফুল আলম বলেন, এ বিষয় নিয়ে গত ২১ আগস্ট পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ) প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠক করি। বৈঠকে বাসে ছাত্রদের হাফ ভাড়া এবং পরিবহন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতারা জানান, বিআরটিএ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহে ৫ দিন (শুক্রবার-শনিবার ব্যতিত) বাসে ছাত্রদের হাফ ভাড়া কার্যকর করে। যা এখনও বলবৎ আছে। তাই সভায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের (নিসআ) নেতারা বাসে ছাত্রদের সপ্তাহে ৫ দিনের স্থলে ৭ দিন হাফ ভাড়া কার্যকর করার জন্য ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের নিকট অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, নিসআর আবেদন বিবেচনা করে ওই সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে বাসে ছাত্রদের হাফ ভাড়া সপ্তাহে ৫ দিনের স্থলে ৭ দিন আগামীকাল ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে (সকাল-৬টা হইতে রাত-১২টা পর্যন্ত)। হাফ পাসের জন্য অবশ্যই শিক্ষার্থীকে ইউনিফর্ম পরিহিত অথবা শিক্ষার্থীর পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র মেট্রো এলাকায় কার্যকর থাকবে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাইওয়ে পুলিশের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক শ্যামল কুমার মুখার্জি। তিনি বলেন, ‘সবাই মিলে যখন দেশকে এই শহরকে ভালোবাসবে, তখন এ দেশের কোনো কিছুই অসুন্দর থাকবে না। নিজেদের জন্য ভালো কিছু করি, প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু রেখে যাই।’
সবার মতামত, পরামর্শ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে দায়িত্ব ও আইনের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনা তৈরির কথা বলেছেন উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক। তিনি রাস্তায় শৃঙ্খলা আনা ও সড়ক নিরাপদ রাখার কথা বলেন।
নগর পরিবহনের প্রকল্প যেভাবে অনুমোদিত হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই আবার চালু করার কথা বলেছেন পরিবহন–বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন আহমেদ। ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার এটিই একমাত্র পথ বলেন তিনি।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এম এ বাতেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সংস্কার হচ্ছে। পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকদেরও নিজেদের সংস্কার করতে হবে। নিজেদের অনিয়ম ও ভুলগুলো নিয়ে সমালোচনা করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি অন্যায় না করি, আইন যদি অমান্য না করি, লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি না চালাই, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় যদি না নামাই, তাহলে সড়ক হবে নিরাপদ ও বিশৃঙ্খলামুক্ত।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আবদুর রহিম বকস, মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি আলাউদ্দিন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ মেহেদি প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম। সচেতনতা সভায় ঢাকা মহানগরে চলা বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির মালিক ও শ্রমিকেরা উপস্থিত ছিলেন।