নিউজ ডেস্ক : শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ভয়-আতঙ্ক আর অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ার শঙ্কায় ভুগছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্তর্ভুক্ত দলগুলোর নেতারাও। আত্মরক্ষার পাশাপাশি নিজেদের দলের ভবিষ্যৎ কী হবে, অস্তিত্বে ফিরে আসা সম্ভব হবে কিনা বা কত দিনে সেটা সম্ভব হবে সেটাই এখন এই জোটের দলগুলোর নেতাদের প্রধান ভাবনা।এই জোটের কয়েকটি দলের দুই চার জন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের বিপর্যয় ও অস্তিত্বহীন পরিস্থিতি তাদেরকেও ভয়, আতঙ্ক ও হতাশার মধ্যে নিয়ে গেছে। এই দলগুলোর নেতা কর্মীরা কেউ দলীয় কার্যালয়ে যান না। সরকার পতনের পর ১৪ দল ভুক্ত এ দলগুলোর নেতারাও নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। ভয়ে আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে গেছেন। কর্মীদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ নেই। নেতা বা কর্মীরা কে কী অবস্থায় আছেন সে খবরও অনেকে নিতে পারছেন না। দলের রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ কি তাও এই মুহূর্তে কেউ বলতে পারেন না। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এই দলগুলোর নেতারা কোনো কথাও বলছেন না। এ জোটেরর অন্তর্ভুক্ত একটি দলের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আগেই জানিয়ে দেন, বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করবেন না। তিনি কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, আমি ভালো আছি। এরপরই তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন। ১৪ দলের অন্তর্ভুক্ত আরেকটি দলের এক নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দেন। দুই চারটা কথা মাঝে তিনি বলেন, আমরা তো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে ছিলাম। এখন এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাদের যে অবস্থা, আমাদেরও সেই অবস্থা। দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।এদিকে গত ৭ আগস্ট বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জোটের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। কামুল আহসান স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্র-জনতা জাগরণের বিজয়কে অভিনন্দন। এ জোটের আরেক অন্যতম শরিক দল জাসদের পক্ষ থেকে এমন কোনো বিবৃতি বা বক্তব্য এখন পর্যন্ত পাওযা যায়নি।দীর্ঘ দিন ধরেই একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকারে ছিল এই জোট। তবে একাদশ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই জোটের দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব বাড়তে থাকে। এই অবস্থায় গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে ১৪ দল অংশ নিলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে অন্য দলগুলোর হতাশা, ক্ষোভ, অভিমান দেখা দেয়। এর মধ্য দিয়ে চলে আসছিল এ জোট। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের মতো এ জোট ভুক্ত দলগুলোও এখন অস্তিত্বহীন রয়ে পড়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা নুর আহমেদ বকুল বৃহস্পতিবার তার ফেববুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, সকল বিতর্ক ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে বাম প্রগতিশীল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হোন। সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ আসছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালের জুন মাসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন হয় ১৪ দল। এই জোটে আসে গণফোরাম, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, ন্যাপ, সাম্যবাদী দল,গণ আজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতন্ত্রী পার্টি, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি। এই দলগুলোর অধিকাংশই ছিল বাম দলগুলোর জোট। তৎকালীন বাম ফ্রন্ট ও ১১ বাম গণতান্ত্রিক দলগুলোর আরেকটি জোট ১১ দল। সিবিপি ও বাসদ এই দুটি জোটে থাকলেও ১৪ দলে যায়নি। এর কয়েক বছর পর ১৪ দলে আরও যুক্ত হয়, জাতীয় পার্টি (জেপি), তরিকত ফেডারেশন ও বাসদ (একটি অংশ)। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ বা দলটির সরকারের কোনো ব্যর্থতা থাকলে জোটের অংশীদার হিসেবে এ দলগুলোর ওপরও সে দায় আসে। আর এ কারণেই দলগুলোর মধ্যে হতাশা, আতঙ্ক ও অস্তিত্বহীনতার ভয় জেকে বসেছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।