নিউজ ডেস্ক : ভারতের সঙ্গে চুক্তি আড়াল করতে নানা কাণ্ড সামনে আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।তিনি বলেছেন, ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি আড়াল করতে ছাগলকাণ্ড, বেনজীরকাণ্ড, আজিজকাণ্ড, হেলিকপ্টারে আসামি গ্রেপ্তারকাণ্ড সামনে আনা হচ্ছে।একজন ডিক্টেটরের (স্বৈরাচার) হুকুমে দেশ চলছে বলেই জনগণ আজ ত্যাজ্য, প্রত্যাখ্যাত ও নিজ দেশে পরবাসী হতে চলেছে। জনগণ শ্বাসবায়ু প্রাণভরে গ্রহণ করতে পারছে না। তবে জনগণ চূড়ান্ত বাধা টপকে বাংলাদেশকে কারও আশ্রিত রাজ্য বানাতে দেবে না।শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যারা ভারত বিরোধিতার ইস্যু খুঁজছেন, তারা আবারও ভুল পথে যাচ্ছেন। ওবায়দুল কাদেরের কথায় ধরে নিতে হবে, আমাদের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে কেউ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে স্থাপনা করে যাবে, তারপরও এর বিরোধিতা করলে সেটি ভুল পথ হবে। এ ধরনের কথা কেবল নতজানু ও জনগণের ক্ষমতা ছিনতাইকারী দেশদ্রোহীদের মুখেই সাজে। রিজভী বলেন, জনগণের সম্মতি ছাড়া ‘চিকেন নেক’কে বাইপাস করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারত রেলপথ নির্মাণ করবে আর সেটি চুপ করে দেখা হবে একাত্তরের শহীদদের রক্তকে অসম্মান করার শামিল। বাংলাদেশে ভেতর দিয়ে রেলপথ বসানোর চুক্তি করে শেখ হাসিনা স্বাধীনতাযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও নিপীড়িত দুই লাখ মা-বোনের সঙ্গে বেইমানি করছেন। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্তেভেজা, ভারত থেকে বয়ে আসা বাংলাদেশের নদীগুলো উষর মরুভূমিতে পরিণত হওয়া, চরম বাণিজ্য ঘাটতির পটভূমিতে এ দেশের বুক চিরে রেললাইন বসিয়ে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহনের সুযোগে জনগণের ভাগ্যে শনির দশা ডেকে আনা হবে। “এমনটি ঘটলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষা এবং নিজস্ব শক্তির ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারবে না। এমনিতেই আমাদের দেশের জনগণের এনআইডির সব তথ্য ভারতকে জানানো হয়েছে। ভারত সবসময় ‘বিগ ব্রাদার’সুলভ গরিমা থেকে বাংলাদেশকে বিবেচনা করে”, বলেন রিজভী। বিএনপির এ নেতা বলেন, ৭ জানুয়ারি একতরফা ডামি নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে বৈধতা দিয়েছে ভারত। তাই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে ভারতকে সব উজাড় করে দিতে কুণ্ঠিত হচ্ছেন না।রিজভী বলেন, দেশে দুর্নীতির মহামারি, লুণ্ঠন আর কুৎসিত অনাচারের নানা রং-বেরঙের কাহিনী এখন মানুষের মুখে-মুখে। আর এই সমস্ত অপকর্মে জড়িতরা প্রায় সবাই ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ। এসব ঘটনা ফাঁস হওয়ায় সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা বেসামাল হয়ে পড়েছেন। ভারসাম্যহীন কথাবার্তা বলছেন। একদিকে বলছেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রচার ষড়যন্ত্রের অংশ, আবার অন্যদিকে বলছেন অভিযোগ সত্য। এ কথার কী অর্থ হতে পারে তা আমার জানা নেই। অভিযোগ সত্য হলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রচার ষড়যন্ত্রের অংশ হবে কেন? এরা বিভ্রান্তিতে ভুগছে, কারণ এই দখলদার আওয়ামী সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাই ছিল ডামি সরকারকে টিকিয়ে রাখার বিশ্বস্ত সৈনিক। অবৈধ একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে এ সমস্ত কর্মকর্তাই ভোটারদের নতজানু রাখতে রীতিমতো ব্লাড-স্পোর্ট বা রক্তখেলায় মেতেছিল। ‘এরা জনগণকে নতজানু রাখতে যথেচ্ছাচার রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করেছে। এরাই ডেলিবারেট কিলিং করেছে, নিয়ন্ত্রণহীন হত্যাকাণ্ডের জন্য নিজ বাহিনীর সদস্যদের কেন সক্রিয় হচ্ছে না সেজন্য ভর্ৎসনা করেছে। গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে উগ্রতা এবং বন্দুকের ভয় দেখিয়ে নীরব রাখার চেষ্টা করেছে। সেজন্যই মন্ত্রী-এমপিরা তালগোল পাকিয়ে স্ব-বিরোধী বক্তব্য রাখছেন। ’বিএনপির শনিবারের (২৮ জুন) সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামীকাল শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ২টা থেকে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হবে। এতে ঢাকাবাসীসহ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের যথাসময়ে সমাবেশে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানাই।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইদুল আলম বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-সম্পাদক আবদুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, মাহমুদুর রহমান সুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল ওয়াদুদ ভুইয়া, তারিকুল আলম তেনজিং, মশিউর রহমান বিপ্লব, শামসুজ্জামান মেহেদী, ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা সেলিম রেজা, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম প্রমুখ।