নিউজ ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন কি না তা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।সরকারপক্ষ বলছে, যে শর্তে খালেদা জিয়াকে দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, বিদেশ যেতে হলে আগের শর্তযুক্ত আদেশ বাতিল কতে হবে।
আর এটি বাতিল করা হলে খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলছেন, বিদেশ যেতে হলে বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতেই যেতে হবে।
বিএনপি বলছে, যে বিধান মতে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে সে অনুসারে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে পারবেন। এর মধ্যে ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার একটা আবেদন করেন। সেই আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন।
দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দণ্ডিত সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি ছিলেন। এরমধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পরিবারের সদস্যদের আবেদনে সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্তি দেয় সরকার। এরপর খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশান এভিনিউয়ের নিজের বাসভবন ফিরোজায় যান।
মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফের মেয়াদ কয়েকবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রতিবার একই শর্তে তাকে কারাগারের বাইরে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, তিনি ঢাকার নিজ বাসায় থেকে তার চিকিৎসা নেবেন এবং দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ অবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে চায় পরিবার।
এ বিষয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) আইনমন্ত্রী একটা পাবলিক স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে চাইলে তাকে একটা আবেদন করতে হবে। মন্ত্রীর সেই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবার থেকে বেগম জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার সাহেব ২৫ সেপ্টেম্বর একটা আবেদন করেন। সেই আবেদনটি এখন পর্যন্ত পেন্ডিং আছে। অফিসিয়ালি তারা কোনো কিছু বলেননি। আমরা প্রত্যাশা করবো আইন অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ এর ১ অনুযায়ী নির্বাহী আদেশে তাকে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেই আইনের সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, কাউকে মুক্তি দিলে তা শর্তযুক্ত বা শর্তহীনভাবে দিতে পারে। এখন সেই আইনেই সম্ভব তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য, যদি সরকারের সদিচ্ছা থাকে। আমরা প্রত্যাশা করছি আইনমন্ত্রী যে পাবলিক স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন আবেদন করলে সদয়ভাবে বিবেচনা করা হবে, আমাদের আবেদনটি এখনও পেন্ডিং আছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি নতুন যে আবেদন করা হয়েছে, সেটা মানবিকভাবে দেখবেন, এটা আইনগতভাবেই সম্ভব।
তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলে আসছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) এর ক্ষমতা বলে শর্তযুক্তভাবে তার সাজা স্থগিত করে তাকে প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখন আইনের যে পরিস্থিতি তাতে যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয় তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার আগে যে শর্তযুক্ত মুক্তি সেটাকে বাতিল করে স্ব অবস্থানে যাওয়ার পর আবার অন্য বিবেচনা করতে হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনও বলছেন একই কথা। তিনি বলেছেন, এখন যদি বলেন ওনারা (খালেদা জিয়ার পরিবার) বাইরে যাবেন, তাহলে তো আরেকটা দরখাস্ত করতে হবে। সেই দরখাস্ত যদি করা হয় তাহলে আগের অর্ডারটা (বর্ধিতের আদেশ) বাতিল করতে হবে। বাতিল করে নতুন আদেশ জারি করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে কিন্তু জটিলতা আছে। বাতিল হলে তো বাইরে থাকতে পারবেন না। এগুলো আইনি জটিলতা। আইনমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলছেন যদি নতুন দরখাস্ত করা হয়, আর দরখাস্ত অনুযায়ী যদি পুরান অবস্থায় ফিরে যান (জেল খানায়) তখন যেটা বিবেচনা আসা যাবে, তার আগে তো করা যাবে না।