নিউজ ডেস্ক : এ বছর শীত শুরু হতেই পাবনার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রোগীর উপচে পড়া চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের অবস্থা বেশ ভয়াবহ।গত এক মাসে এ দুই ওয়ার্ডে রোগীর ভর্তির সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছেন প্রায় ২৫০। শিশু ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তি আছে ৯২; ৮৫ জন ভর্তি আছেন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে। গত এক সপ্তাহে হাসপাতালের শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ১০।হাসাপাল সূত্র বলছে, মৌসুমের শুরুতে এত রোগীর চাপ ভালো লক্ষণ নয়। অধিক রোগীর চাপ সামলাতে বেশ হিমসিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের। সেবাগ্রহীতা রোগী ও তাদের স্বজনরাও বিপাকে পড়েছেন। ওয়ার্ডগুলোয় শয্যা সংখ্যা রোগীর তুলনায় কম। যে কারণে তাদের মেঝে বা বারান্দায় সেবা নিতে হচ্ছে।শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশর মধ্যে থেকে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব না হলেও উপায় না পেয়ে তারা সেবা গ্রহণ করছেন।জেলায় বেসরকারি হাসপাতালে সেবা অপ্রতুল। প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জের বাসিন্দাদের একমাত্র আস্থা সরকারি এ হাসপাতালটি। কিন্তু সামান্য চিকিৎসা সেবা ছাড়া আর কোনো সুযোগ-সুবিধা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেই বলে অভিযোগ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। অনেকে জানিয়েছে, শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও স্যালাইন সরবরাহ থাকে না। তাদের বাইরে থেকে নিয়ে নিয়ে আসতে হয়। নোংরা-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে নবজাতক শিশুর জন্ম হচ্ছে। প্রসূতি ও তাদের সন্তানদের সেখানেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। পাবনা জেনারেল অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।আছে আরও অভিযোগ। বিভিন্ন রোগীর অভিযোগ, রোগীদের সেবা পেতে দেরি হয়। নার্সদের নিজেদের মধ্যেই বিভিন্ন সময় ঝামেলা লেগে থাকে। এক বেলা ডাক্তার আসে, আরেক বেলা পাওয়া যায় না। ইন্টার্ন দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা চলছে। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে বাধ্য হওয়া লাগে। হাসপাতালে রোগীর চেয়ে দালাল বেশি। সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠায় খোদ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরাই। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে কবে পরিত্রাণ পাবেন, প্রশ্ন রেখেছেন ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনরা।এসব ব্যাপারে কথা হলে হাসপাতালে দায়িত্বরত কজন নার্স জানান, শীত শুরু হতেই যেভাবে রোগীর ভর্তি শুরু হয়েছে, তাতে করে স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়ে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কলেরার স্যালাইন সরবরাহ ছিল না। এ ওয়ার্ড দুইভাগে বিভক্ত। একটি পরিচালিত হয় মেডিসিন থেকে, অপরটি শিশু বিভাগ থেকে। নার্সরা নিয়ম অনুসারে সেবা দিয়ে থাকেন।অপ্রতুল স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধের অপ্রতুলতার কারণে তাদের সেবা দান ব্যাহত হয়েছে। তা ছাড়া ১৫ শয্যার ডায়রিয়া বিভাগে প্রতিদিন বহু রোগী আসে। ভর্তি আছে ৮৫ জন। সব সেবা তাদের হাতে থাকে না। ফলে তাদের কিছু করার থাকে না। হাসপাতাল থেকে দেওয়া হলে নার্স বা সংশ্লিষ্টজনদের দিতে বাধা নেই।হাসপাতালের সিনিয়র নার্স আম্মিয়া পারভীন, ১০ শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যেসব শিশু মারা গেছে, তাদের অবস্থা আগে থেকেই খুবই সংকটাপন্ন ছিল। সংশ্লিষ্টরা তাদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে অনেক চেষ্টাও করেছে।সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হলে পাবনার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক ডা. ওমর ফারুক মীর বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় আসলে পাবনায় একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু হওয়া দরকার। আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে শয্যার তুলনায় রোগী বেশি ভর্তি। দৈনিক ৫০০-৬০০ রোগী ভর্তি আছে। ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে গত কয়েকদিন বেশ চাপ ছিল। এখনও শয্যার চেয়ে চারগুণ বেশি রোগী রয়েছে।তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে যে সংকট রয়েছে, সেটি মোকাবিলায় আমরা সচেষ্ট। সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে আমরা সেভাবে করার চেষ্টা করছি। রোগী বা তাদের স্বজনদের অভিযোগও ফেলে দেওয়ার মতো নেই। স্বল্প সরবরাহ দিয়ে রোগীর সেবা করা কঠিন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।