সমাচার রিপোর্ট : চারদিনের সরকারি সফরে আজ সোমবার ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলোও নিষ্পত্তির ইতিবাচক অগ্রগতি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর উপলক্ষে গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। ব্রিফিং আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নয়াদিল্লি পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবেন। ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে ‘গার্ড অব অনার’র মধ্য দিয়ে তার আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা হবে। এরপর তিনি রাজঘাট মহাত্মা গান্ধী সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা অর্পণ করবেন। তিনি আরও জানান, এরপর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘হায়দ্রাবাদ হাউজ’-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। দু’দেশের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি যেমন- দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ জ¦ালানি খাতে সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ প্রভৃতি অধিক গুরুত্ব পাবে আলোচনায়। সফরে সাতটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এমন চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকের সংখ্যা সাতটি হতে পারে, আবার বেশিও হতে পারে। এসব চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক পানি ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রেলওয়ে, আইন, তথ্য ও সম্প্রচার, প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত। ড. মোমেন জানান, মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এবারের সফরে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনাসদস্য শহীদ হয়েছেন বা আহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্টুডেন্ট স্কলারশিপ’ দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থেকে শহীদ ও আহত ভারতীয় সেনাসদস্যদের পরিবারের মধ্যে এ স্কলারশিপ নিজ হাতে তুলে দেবেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় সেনাসদস্যদের মহান আত্মত্যাগকে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ভারত সফর করবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি বিজনেস ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই ইভেন্টে উপস্থিত থাকবেন। বিজনেস ইভেন্টের মাধ্যমে যেমন বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের চিত্র ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরা যাবে, তেমনি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সুসম্পর্ক বর্তমানে বিশেষ উচ্চতায় অবস্থান করছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে স্থলসীমানা ও সমুদ্রসীমানা নির্ধারণ সারাবিশ্বের সামনে সহযোগিতার ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় যেমন নিরাপত্তা ইস্যু, আন্তঃসংযোগ, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জনযোগাযোগ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক, আন্তঃদেশীয় বাস চলাচল, রেল ও নৌপথে যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুদেশের শীর্ষ পর্যায়ের বিগত সফরের কথা তুলে ধরে ড. মোমেন জানান, প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে সর্বশেষ ভারত সফর করেন। পরবর্তীতে কোভিড মহামারির ফলে ২০২০ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এক ভার্চুয়াল সামিটে অংশ নেন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং ডিসেম্বর মাসে ভারতের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের আয়োজনে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফর করেন। ‘এমতাবস্থায়, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনিষ্পন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা অর্জন করা যাবে বলে প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক গভীরতর হওয়াসহ সার্বিকভাবে এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যোগ গৃহীত হবে। এই সফর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ও বিদ্যমান গতিশীল সম্পর্ককে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা যায়।’ ড. মোমেন বলেন, চলমান কোভিড মহামারি, ইউক্রেন সংকট এবং বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে এই সফর দু’দেশের পারস্পরিক সমঝোতা ও সাহায্যের মাধ্যমে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বা নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের সীমানায় দফায় দফায় গোলা পড়ার ঘটনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা বলছে এ ঘটনা উসকানিমূলক নয়, এটা ভুলে এসে পড়েছে। তবে সবকিছুই মাথায় রেখে আমরা সীমান্তে বিজিবিসহ সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলেছি। এ ধরনের ঘটনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে না। জ¦ালানি তেল কেনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, জ¦ালানি ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বিদ্যমান। তবে তৃতীয় কোনো দেশের তেল ভারতের মাধ্যমে কেনার কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই। জ¦ালানি সহযোগিতা আরও বাড়ানোর বিষয়ে সেদেশের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সফরে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকসহ সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী এ সফর শেষে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা ফিরবেন।