আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র- এটি খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী সবচেয়ে আকর্ষণীয় সুদৃশ্য নয়নাভিরাম পর্যটন স্পট। সূর্যাস্তের পর আলুটিলা থেকে খাগড়াছড়ি দেখা অর্থাৎ রাতের খাগড়াছড়ি শহর যেন আরেক মনোলোভা দৃশ্য। দূর থেকে দেখা যায় ঘন কালো অন্ধকারে লাখো বাতির মিটি মিটি আলো। যেন কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা কল্পচিত্র। আলুটিলায় পর্যটকদের জন্য বসার এবং পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে।
রহস্যময় সুরঙ্গ- আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকদের আরেকটি আকর্ষণ। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ সুরঙ্গে এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হওয়া যায়। পাহাড়ের চোরা এ সুরঙ্গ দিয়ে একা ভ্রমণ যেকোনো পর্যটকের শরীর শিউরে উঠবে। তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সুরঙ্গে ঢোকার জন্য মশাল পাওয়া যায়।
রিছাং ঝরনা- আলুটিলার পাদদেশে এই ঝরনাটি অবস্থিত। স্থানীয় মারমারা ঝরনাটিকে রিছাং ঝরনা নাম দিয়েছে। এ ঝরনা থেকে কিছু দূরে প্রায় ৩০ হাত উচ্চতার আরো একটি ঝরনার দেখা মিলবে। পাহাড় আর সবুজের বুক চিরে ঠাণ্ডা পানি অনবরত দুই ঝরনা ছুটে চলছে।
দেবতা পুকুর- জেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মাইসছড়ির নুনছড়িতে ৭৫০ ফুট উপরে অবস্থিত একটি ভিন্ন প্রকৃতির স্বচ্ছ পানির অপূর্ব প্রাকৃতিক পুকুর। স্থানীয় আদিবাসী ত্রিপুরাদের মতে, পাহাড়ের উপরের এই পুকুরের পানি কখনো কমে না এবং পানি পরিষ্কারও করতে হয়না বলে তার নাম দিয়েছে মাতাই পুখুরি। অর্থাৎ দেবতা পুকুর। বছরের অধিকাংশ সময় পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যায় এ পুকুরে। তবে নববর্ষ বা বৈসাবির দিনগুলোতে হাজার পর্যটকের দেখা মেলে এখানে।
অরণ্য কুটির- খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় অবস্থিত এ বৌদ্ধ মন্দির। এখানে দেখা যাবে দেশের অন্যতম বৃহত্তম বৌদ্ধ মূর্তি। অরণ্য কুটিরে রয়েছে ৪৮ ফুট উচ্চতার বাংলাদেশের বৃহত্তম বৌদ্ধ মূর্তি। বিশাল এলাকা জুড়ে সবুজের পাশাপাশি এ মূর্তি ছাড়াও আরো অনেক মূর্তি দেখা মিলবে।
তৈদু ছড়া ঝরনা- খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ও দীঘিনালা উপজেলার সীমান্তস্থল দুর্গম সীমানা পাড়া গ্রামে অবস্থিত তৈদুছড়া ঝরনা। আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হবে এ ঝরনায়। অ্যাডভেঞ্চার এ যাত্রায় যেতে যেতে আপনি দেখতে পাবেন ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রা। শেষ পর্যায়ে দেখবেন বিশাল বিশাল হাতির মাথা আকৃতির পাথরের সারি। তারপর বিশাল সেই তৈদু ছড়া ঝরনা। ঝরনার সেই পানির প্রবাহ দিয়ে গেলে দেখতে পাবেন আরো একটি সুউচ্চ ঝরনা।
জেলা পরিষদ পার্ক- জেলা সদরের জিরো মাইল এলাকায় প্রায় ২২ একর জায়গাজুড়ে এই পার্কটির অবস্থান। দুই পাহাড়ের সংযোগে এখানে রয়েছে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ, রয়েছে বাচ্চাদের জন্য কিডস জোন, রয়েছে পর্যটন কটেজ। পার্বত্য জেলা পরিষদের সরাসরি তত্বাবধানে পরিচালিত এই পার্কে রান্নাবান্নাসহ পিকনিক করার আদর্শ জায়গা।
যাতায়াত ব্যবস্থা- ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে বিভিন্ন সমিতির আরামদায়ক বাস ছাড়ে। যেমন এস আলম, সৌদিয়া, শান্তি, শ্যামলী, স্টার লাইন ইত্যাদি। ঢাকার সায়াদাবাদ, কমলাপুর, ফকিরাপুল, গাবতলী, কলাবাগান, টিটি পাড়া থেকে টিকিট সংগ্রহ করে খাগড়াছড়ি আসা যায়। আবার ট্রেনে আসতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনে এসে চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে বাসের টিকিট সংগ্রহ করে খাগড়াছড়ি আসা যায়।
কোথায় থাকবেন- খাগড়াছড়িতে থাকার ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো। আধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন পর্যটন মোটেল। তাছাড়া জেলা সদরে ব্যক্তি মালিকানাধীন শৈল সুবর্ণ, হোটেল জিরান, নিলয়, ফোর স্টার, লবিয়তে সহনীয় ভাড়ায় থাকা যায়।
কীভাবে ঘুরবেন- শহরেই চাঁদের গাড়ি, কার, মাইক্রো পাওয়া যায়। দরদাম করে ঘুরে আসতে পারেন পর্যটন এলাকাগুলো।