নিউজ ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস, দুর্নীতি-অপশাসনের তথ্য আড়াল করতে সরকার নতুন দুটি ‘নিবর্তনমূলক’ নীতিমালা করেছে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অবিলম্বে নীতিমালা দুটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনি।মির্জা ফখরুল বলেন, নিবর্তনমূলক এই নীতিমালা দুটি হলো—‘রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস-২০২১’ এবং ‘ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনা নীতিমালা-২০২১’।শনিবার (১২ মার্চ) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নীতিমালা দুটি বাতিলের দাবি জানায় বিএনপি।দলটির মহাসচিব বলেন, সোজা কথায় বলা যায়, এই নিবর্তনমূলক নীতি দুটি তৈরি করা হয়েছে শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি-অপশাসন, তাদের ভোট ডাকাতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম ও বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলোর প্রচার ঠেকাতে। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যে পরিমাণ ইতিহাস বিকৃতি করেছে, সেই বিষয়ে কথা না বলার জন্যও তারা এই নীতিমালা ব্যবহার করবে।মির্জা ফখরুল বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট পোক্ত করতেই এই দুটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে করে আরও শক্ত করে ধরা যায়। দেশের জনগণের বাকস্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে, সংবাদপত্র, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং দেশি-বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে বিটিআরসি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এই দুই নীতিমামলাসহ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন খসড়া করেছে। যদি দেখি, সরকার এই নীতিমালা গ্রহণ করে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তখন আমরা অবশ্যই কর্মসূচি দেব।বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই দুই নীতিমালা শুধু বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিকই নয়, বরং জাতিসংঘ ঘোষিত ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস (ইউডিএইচআর) এবং ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিপিআর) এর পরিপন্থি। সেই সাথে জাতিসংঘের অনুমোদিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ম্যানিলা প্রিন্সিপাল এবং সান্তা ক্লারা প্রিন্সিপালের সিদ্ধান্তের দৃষ্টিতে দেখলে নীতিমালা দুটি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।তিনি বলেন, এই নীতিমালা প্রণয়নের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হলো—সত্যকে আড়াল করে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠরুদ্ধ করে একদলীয় বাকশালি কায়দায় ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা।মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এই নির্বতনমূলক নীতিমালা কার্য্কর হলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি অনলাইন ভিত্তিক মিডিয়াগুলোর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করবে। পাশাপাশি অনলাইন এনক্রিপশন অকার্যকর করে নিরাপত্তাকে দুর্বল করে ফেলবে। এর ফলে মানবাধিকারের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। সাংবাদিক, বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।