সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা-হয়রানিতে উদ্বেগ সম্পাদক পরিষদের

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা-হয়রানিতে উদ্বেগ সম্পাদক পরিষদের

ঢাকা: দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এসব মামলা হওয়ায় আইনটির প্রয়োজনীয় সংশোধনের দাবি করেছে সম্পাদক পরিষদ।

সোমবার (২৪ আগস্ট) পরিষদের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক নঈম নিজাম এক বিবৃতিতে বলেন, চলমান করোনাকালীন সংকটে বিশ্ব এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সকল অর্থনৈতিক গতিশীলতা ও স্বাভাবিক জীবন থমকে গেছে। এ অবস্থায় সংবাদপত্র শিল্প এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সংবাদপত্র শিল্পও প্রকটভাবে একই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। পাঠক ও পত্রিকা প্রচার সংখ্যা কমে গেছে। বিজ্ঞাপনও কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। পত্রিকাগুলো টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করার চেষ্টা করছে।

পত্রিকার পৃষ্ঠা সংখ্যা কমিয়ে, প্রশাসনিক ও অন্যান্য ব্যয় সংকোচ করেও এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া যাবে, তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা বাংলাদেশের সংবাদপত্রের জগতে আগে কখনও আসেনি। আমরা এমন অবস্থাতেও সব প্রতিকূলতা সামলে পত্রিকা প্রকাশ অব্যাহত রেখেছি। পাঠকদের কাছে সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার কাজ বাধাগ্রস্ত হতে দিইনি। আমরা এই ঝুঁকির সম্মুখীন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কাজ করে যাচ্ছি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে সংবাদপত্র একটি সেবা শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। এর প্রথম লক্ষ্য বৃহত্তর পরিসরে দেশ ও জনগণের সেবা করা। কিন্তু এই লক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো সাহায্য ও সহযোগিতা সংবাদপত্র শিল্প কখনও পায়নি। সেবা শিল্প তো নয়ই, মূনাফাকারী সাধারণ শিল্পগুলো যে সহযোগিতা পায়, সংবাদপত্র শিল্প তা থেকেও বঞ্চিত। এ অবস্থা বিবেচনা করে সংবাদপত্রগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে, দাবি-দাওয়া পেশ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা গেছে যে, সরকারের পক্ষ থেকে কখনো তা আমলে নেওয়া হয়নি। বরং দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সেবা শিল্পের প্রতি উদাসীনতা ও অসহযোগিতামূলক মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে।

এই করোনাকালীন পরিস্থিতিতে সংবাদকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ অব্যাহত রেখে জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা প্রমাণ করে যাচ্ছেন। কিন্তু দিনে দিনে তাদের পেশাগত ঝুঁকি বেড়েই যাচ্ছে। তাদের কাজ করতে হচ্ছে নানাবিধ চাপ ও হুমকির মুখে। সংবাদ প্রতিষ্ঠান ও সংবাদকর্মীরা সেলফ সেন্সরশিপ অবলম্বন করতে বাধ্য হচ্ছেন। যা একটি সুস্থ ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক ও সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে, দেশের যত্রতত্র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানি বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। আর এর জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি। সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীদের আলাদা কোনো রক্ষাকবচ সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। সেখানে এর বিপরীতে এমন নেতিবাচক আইনি পরিস্থিতিতে ডিজিটাল আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন অতি জরুরি বলে আমরা মনে করি।

অনলাইনে সংবাদ সরবরাহের জন্য সংবাদপত্রগুলোর আলাদা সরকারি অনুমোদন লাগবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথমত আমরা মনে করি যে, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর যেমন অনলাইন সংবাদ সরবরাহের জন্য আলাদা করে কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না, সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেও তেমন হওয়া যৌক্তিক। কারণ সংবাদপত্রগুলো টেলিভিশন চ্যানেলের মতোই সরকারের অনুমোদন নিয়ে প্রকাশ হয়। এরকমই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর যৌথসভায়। অনলাইন নিউজপোর্টালগুলোর প্রথম দফায় নিবন্ধনের জন্য ৩৪টি নিউজপোর্টালের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, এই তালিকায় দেশের পরিচিত, প্রধান ও গ্রহণযোগ্য সংবাদপত্রগুলোর পোর্টালের নাম নেই। আমরা এ বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে দ্রুত ও যৌক্তিক সমাধান আশা করি।

তথ্য বর্তমান পৃথিবীতে জনগণের অধিকার রক্ষার এক অন্যতম পূর্বশর্ত। এই বৃহত্তর স্বার্থে সংবাদপত্র সবার সহযোগিতা দাবি করতে পারে। বর্তমানের এই বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট ও হকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমাদের পাশে থাকার আহ্বান জানাই।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

মাদকের টাকার জন্য মা’কে হত্যা: নিজেই পুলিশের হাতে ধরা দিলেন ছেলে

জোরপূর্বক পদত্যাগের পর স্ট্রোকে মারা গেলেন হাজেরা তজু কলেজের উপাধ্যক্ষ