চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে মিডশিপম্যান ২০১৮/বি ব্যাচ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার (ডিইও) ২০২১/এ ব্যাচের নবীন কর্মকর্তাদের গ্রীষ্মকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে সাইফ খান বিজন ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেছেন। সদ্য কমিশনপ্রাপ্তদের মধ্যে সব বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করে সেরা চৌকস মিডশিপম্যান নির্বাচিত হন তিনি।রোববার (২৭ জুন) নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ এ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৪৭ জন মিডশিপম্যান এবং ১৮ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ মোট ৬৫ জন নবীন কর্মকর্তা কমিশন লাভ করেছেন। এদের মধ্যে ৯ জন নারী কর্মকর্তা। মিডশিপম্যান মো. আবুল কাশেম প্রশিক্ষণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘নৌ প্রধান স্বর্ণপদক’ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ব্যাচ থেকে অ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট মো, মেহেদী হাসান তুহিন শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নৌবাহিনী প্রধান তাঁর ভাষণে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের এ বিশেষক্ষণে স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সেই সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বীর নৌসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অসামান্য প্রজ্ঞায় বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা ও পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি ত্রিমাত্রিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে ইতিমধ্যে বর্তমান সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে নৌপ্রধান বলেন, প্রায় এক দশকে নৌবহরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আধুনিক যুদ্ধজাহাজ, হেলিকপ্টার, মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফটসহ আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে এবং সম্প্রতি নতুন ৬টি যুদ্ধজাহাজ নৌবহরে কমিশনিং করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আরও উন্নততর জাহাজ এবং আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন ঘাঁটিগুলোর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। নৌবাহিনী পরিচালিত ডকইয়ার্ড ও শিপইয়ার্ডগুলোর আধুনিকায়নের কাজও চলমান রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়োচিত বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে এখন পর্যন্ত অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রণীত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক নৌসদস্যের জন্য টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্যোগময় এ পরিস্থিতির মধ্যে নবীন কর্মকর্তারা তাদের মনোবল অক্ষুণ্ন রেখে যে উন্নত প্রশিক্ষণ ও পেশাদারত্বের পরিচয় দিয়েছে নৌপ্রধান তার প্রশংসা করেন। নৌপ্রধান একইসঙ্গে কঠোর এ প্রশিক্ষণ প্রদানে যেসব কর্মকর্তা, প্রশিক্ষক ও নৌসদস্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের প্রতিও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আজকের নবীন কর্মকর্তারা নেভাল একাডেমি থেকে অর্জিত জ্ঞান যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেদের যোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তুলবে এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে এ প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও অগ্রগতির পথে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে। তিনি পেশা হিসেবে দেশ সেবার এ পবিত্র দায়িত্ব বেছে নেওয়ায় নবীন কর্মকর্তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান। সেই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর গর্বিত সদস্য হিসেবে দেশপ্রেম ও শৃঙ্খলাবোধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নবীন কর্মকর্তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করার পরামর্শ দেন। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উচ্চপদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তা ও সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে নবীন কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিভাবে শপথ নেন এবং তাদের র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়।