মেঘনা তীরের আরেক সংকট লবণাক্ততা

মেঘনা তীরের আরেক সংকট লবণাক্ততা
আবুল খায়ের নামে এক কৃষক জানান, তাদের এলাকায় প্রায় ১শ একর জমির মধ্যে সয়াবিন চাষ করেছিলো এলাকার কৃষকরা। লবণাক্ততার কারণে একজন কৃষকও ঘরে ফসল তুলতে পারেননি। তেমনিভাবে যারা ধান ও অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করেছিলেন তাদেরও একই অবস্থা।

আশালি আসল পাড়ার বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, তিনি ৬০ শতক জমির মধ্যে সয়াবিন চাষ করেছিলেন। ফসলও ভালো হয়েছিলো, অপেক্ষা করছিলেন ফসল ঘরে তোলার কিন্তু জোয়ার এসে তার সব সয়াবিন নষ্ট করে দিয়ে গেল। লবণ পানির কারণে তার সব সয়াবিন মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে।  আবুল খায়ের নামের আরেক কৃষক জানান, তিনি ১৬০ শতক জমিতে লবণ সহিষ্ণু ধান চাষ করেছিলেন। মাত্রাতিরিক্ত লবণ পানির কারণে তিনিও ফসল ঘরে তুলতে পারেননি।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মতিরহাট ও লুধুয়া মাছঘাট এলাকার কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনার পানিতে লবণ বেড়ে গেছে। এখন নদীর পানিতে লবণাক্ততা নতুন সমস্যা।
এ বিষয়ে কথা হয় লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেঘনার পানিতে লবণাক্ততা বেড়েছে। জোয়ারের পানি নদীতে প্রবেশ করছে নদীর পানি দিনকে দিন কমছে।
নোয়াখালীর হাতিয়া, সুবর্ণচার, নিঝুমদ্বীপ ও লক্ষ্মীপুরের কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেঘনার পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে তারা আশানুরুপ মাছ পাচ্ছেন না।

কথা হয় চর আলেকজান্ডারের আসল পাড়া এলাকার সাফিয়া (৫০) নামে আরেক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এলাকায় লবণ পানি প্রবেশ করায় তাদের চামড়ায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
রোকেয়া বেগম ও নার্গিস আক্তার নামে আরও দুই নারী বলেন, লবণাক্ততার সমস্যাটা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে গেছে, আগে মেঘনার পানি এত লবণাক্ত ছিলো। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে এলাকার নারীরা বিভিন্ন ধরনের মেয়েলি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা হয় লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমেও অস্বাভাবিক জোয়ারে লবণাক্ত পানির কারণে উপজেলার ৩৭০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর মধ্যে আউশ ধান রয়েছে ৩৬০ হেক্টর ও সবজি রয়েছে ১০ হেক্টর।

মেঘনার নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে কথা হয়, সমুদ্র ও মৎস গবেষক নিজাম উদ্দিন জেমসের সঙ্গে। তিনি বলেন, মিঠা পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় লবণাক্ত সমস্যা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক নদী প্রবাহ বিঘ্ন ঘটার কারণেও এটি হতে পারে। আবার ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক কারণেও লবণাক্ততা বাড়তে পারে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও নদী গবেষক এ জি এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের নদীগুলোতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার এর মধ্যে সবচেয়ে বড় একটা কারণ হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ কর্তৃক ক্রমাগতভাবে নদীর পানি প্রত্যাহার। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদীর মধ্যে প্রায় সব কটিতেই ভারত একচেটিয়া পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। নদীতে পানির প্রবাহ কম থাকার কারণে সাগরের পানি ঢুকে পড়ছে, এর ফলে লবণাক্ততা বাড়ছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

১৬৯ কর্মচারিকে চাকরিচ্যুত করলো রাসিক

মেহেন্দিগঞ্জ পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কর্মসূচি-৩ পরকল্পের চেক বিতরণ