নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ব্যক্তিস্বার্থ ও মোহের ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে জনমানুষের কল্যাণ ও দেশের ধারাবাহিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনীকে কাজ করতে হবে। জনগণের সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মানসিকতা নিয়ে পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণ না করে প্রতিকূল ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।সোমবার (১৪ জুন) সকালে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এ কথা বলেন।এর আগে আইজিপি পুলিশের প্রশিক্ষণের পাদপীঠ শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩৮তম বহিরাগত ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এসময় প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের পদক বিতরণ করেন আইজিপি।করোনা মহামারীকালে বাংলাদেশ পুলিশের আত্মত্যাগ ও অনবদ্য অবদানের কথা উল্লেখ করে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, দেশের সকল ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ পুলিশ অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। করোনাকালে দায়িত্বের বাইরে গিয়েও জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। করোনাক্রান্ত ব্যক্তিকে যখন আত্মীয়-স্বজন ত্যাগ করে চলে গেছে, তখন পুলিশ আত্মীয়ের ন্যায় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এজন্য মানুষ পুলিশকে সম্মান করেছেন, ভালোবেসেছেন।তিনি বলেন, যারা নানা কারণে পুলিশের সমালোচনা করতেন, তারাও আজ পুলিশের পক্ষে কথা বলছেন, কলম ধরেছেন। পুলিশের প্রতি মানুষের এ বিশ্বাস, আস্থা ও সম্মান আমাদেরকে ধরে রাখতে হবে। মানুষের প্রথম ভরসাস্থল হিসেবে কাজ করতে হবে।পুলিশ প্রধান বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা ও অভাবনীয় সাফল্য সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষায়িত বিভিন্ন ইউনিট গঠন এবং ধারাবাহিকভাবে জনবল বাড়ানোর ফলে পুলিশের কর্মদক্ষতার উন্নয়ন ঘটেছে। নতুন অপরাধ ও কৌশল মোকাবেলায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। জনগণের কল্যাণে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব, ডিএনএ পরীক্ষা, সাইবার ক্রাইম, ফিনান্সিয়াল ক্রাইম, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারী ও শিশু, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক হেল্প ডেস্ক, বিট পুলিশিং, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ সহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।তিনি বলেন, পুলিশের পোশাকের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। এ সময় আইজিপি জনগণের প্রতি অপেশাদার আচরণ বন্ধ করা, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, বিট পুলিশিং ও পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ এ পাঁচটি নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সকল পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।দীর্ঘ এক বছর কঠোর পরিশ্রম, অনুশীলন ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে দেশ মাতৃকার সেবায় নিজেদেরকে প্রস্তুতকারী ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টরদের অভিনন্দন জানিয়ে আইজিপি বলেন, প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান, মেধা ও পেশাদারিত্বের সর্বোত্তম ব্যাবহারের মাধ্যমে পুলিশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে হবে। জ্ঞানের অনুশীলন, কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা, নৈতিকতা এবং সততার চর্চা করতে হবে, সর্বোপরি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০২১-২০৪১ বাস্তবায়নের অন্যতম সারথী হিসেবে দেশের জন্য রক্ত দিয়ে গড়া পুলিশ বাহিনীকে উন্নত দেশের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।এর আগে আইজিপি বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের পদক প্রদান করেন। পদকপ্রাপ্তরা হলেন, শ্রেষ্ঠ ক্যাডেট (পুরুষ) তানভীর আহমদ, শ্রেষ্ঠ ক্যাডেট (নারী) নাসরিন সুলতানা জ্যোতি, একাডেমিক কামরুল হাসান, প্যারেডে অলক বিহারী গুণ, পিটি ও বাধা অতিক্রমে আবদুল কাদির খন্দকার, ম্যাসকেট্রিতে নাজমুস সাকিব শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছেন।এদিকে, সমাপনী প্যারেডে ৫৭ জন নারীসহ এক হাজার ২৩১ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। প্যারেড কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াকুব হোসেনের নেতৃত্বে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি কন্টিনজেন্টের সদস্যরা সুশৃঙ্খল ও দৃষ্টিনন্দন প্যারেড উপহার দেন। সকালে তিনি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে একাডেমির প্রিন্সিপ্যাল অতিরিক্ত আইজি খন্দকার গোলাম ফারুক তাকে স্বাগত জানান।আইজিপি একাডেমি চত্বরে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, ব্যারাক ভবন এবং একাডেমি মসজিদের বর্ধিতাংশের উদ্বোধন করেন। তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন। আইজিপি একাডেমি চত্বরে একটি গাছের চারা রোপণ করেন।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা, অতিরিক্ত আইজিরা, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা, রাজশাহী বিভাগ ও জেলায় কর্মরত উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা, প্রশিক্ষণার্থীদের অভিভাবকগণ এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা।