সমাচার রিপোর্ট : রাজধানীর দক্ষিণখানের বাসিন্দা আজহারের স্ত্রীর প্রতি কুনজর ছিল দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুর রহমানের। বিষয়টি জানার পর ইমামকে নিষেধ করতে মসজিদে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে যাওয়ার পর বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে আজহারের গলায় আঘাত করেন ইমাম। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আজহারের লাশ ছয় টুকরা করা হয়। এরপর মসজিদের সেপটিক ট্যাঙ্কে মরদেহের টুকরোগুলো লুকিয়ে রাখেন ইমাম। ইমাম পুরো কাজটি করেন দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদে তার শয়ন কক্ষে। ট্যাঙ্ক থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আজহারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাওলানা মো. ইমাম আবদুর রহমানকে (৫৪) আটক করে র্যাব। মঙ্গলাবার বিকেলে কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের ঘটনার বর্ণনা দেন র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আবদুল মুত্তাকিম। তিনি বলেন, গত ১৯ মে রাতে মসজিদে ইমামের কক্ষে গিয়েছিলেন আজহার। সেখানে বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে আজহারকে ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়। কী নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়েছিল জানতে চাইলে র্যাব-১ এর অধিনায়ক আবদুল মোত্তাকিম বলেন, ইমাম রহমান বলেছেন- আজহার অভিযোগ করছিল তার স্ত্রীর দিকে কুনজর রয়েছে। কিন্তু আজহারের স্ত্রীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছেন ইমাম। র্যাব জানিয়েছে, হত্যাকান্ডে নিহতের স্ত্রী জড়িত কি-না তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার একদিন আগে স্ত্রী আছমা তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে চলে যায়। তিনি ঘটনার আগেরদিন থেকে টাঙ্গাইলেই ছিলেন কি-না এবং হত্যায় তার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে গত সোমবার মসজিদের সিঁড়িতে রক্তের দাগ ও সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। এ ছাড়া আজহার ১৯ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এমন ঘটনায় অনুসন্ধান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে র্যাব ইমামকে আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার ঘটনা জানতে পারে। এ সময় অভিযুক্তের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত তিনটি চাকু ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। র্যাব জানায়, মাওলানা মো. আবদুর রহমান সরদারবাড়ি জামে মসজিদে ৩৩ বছর ইমামতি করে আসছিলেন। নিহত আজহারের ছেলে আরিয়ান মসজিদটির মক্তবে পড়াশোনা করত। নিহত আজহারও তার কাছে কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করত। এই সুবাদে তাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। গত ১৯ মে মাওলানা আবদুর রহমানের সঙ্গে আজহারের কথা কাটাকাটি হয়। কথাকাটির একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে আজহারের গলার ডানপাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে আবদুর রহমান। পরে হত্যাকান্ডের ঘটনা ধামাচাপা দিতে হত্যাকারী ভিকটিমের লাশ টুকরো টুকরো করে সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাঙ্কে লুকিয়ে রাখে। এরপরে ইমাম আবদুর রহমান মসজিদে নিজের রুমেই অবস্থান করছিলেন। পরকীয়ার কোনো ঘটনা ছিল কি-না জানতে চাইলে লে. কর্নেল মোত্তাকিম জানান, এই ঘটনায় পরকীয়ার কোনো ঘটনা ঘটেছে কি-না তা আমরা যাচাই-বাছাই করছি। এখনই কিছু বলতে পারছি না। তবে ইমাম আবদুর রহমান বলেছে, আজহার তাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে এবং বলেছে তার স্ত্রীর দিকে আমি (আব্দুর রহমান) কু-দৃষ্টি দিয়েছি। এই কারণে তার সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। এরপরই রাগান্বিত হয়ে হত্যার ঘটনা সংগঠিত হয়। নিহতের স্ত্রী র্যাবে হেফাজতে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা কিছু সময় আগে তার স্ত্রী আসমা বেগমকে আমাদের হেফাজতে নিয়েছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো সম্ভব হবে। ধারালো অস্ত্রগুলো কীভাবে এলো জানতে চাইলে লে. কর্নেল আবদুল মুত্তাকিম বলেন, তিনি (ইমাম) দীর্ঘদিন ধরে ওই মসজিদে চাকরি করতেন। কোরবানির সময় পশু জবাই করার জন্য তিনি এগুলো রাখতেন। সেই অস্ত্র দিয়েই এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।