নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর ওপর দিয়ে বর্তমানে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতি যেন তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ছে।তাই রোজাদারদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এই কাঠফাটা গরমে প্রায় ১৫ ঘণ্টা রোজা রেখে শরীরকে সতেজ রাখাটা কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের। এ বছরে রোজা শুরু হয়েছে একেবারে বৈশাখেই। গ্রীষ্মের তেজও এ বছর যেন বেশি। ফলে রমজানে রোজাদারদের পানিশূন্যতা, লবণ শূন্যতা ও বদহজম যেন না হয়, সেদিকে নজর দিতে হচ্ছে বেশি। লম্বা সময় রোজা রাখার পর দিনশেষে তাই ভাজাপোড়া ইফতার পরিহার করছেন বেশিরভাগ রোজাদারই। অনেকেই ঝুঁকছেন ফলমূলের দিকে।তাই বিকেল হতেই ফলের বাজারে ভিড় বাড়ছে। বলা হয়, ফলমূল দিয়ে সাজানো প্লেটই আদর্শ ইফতার। কিন্তু স্বস্তি নেই ফলের বাজারেও! রমজানে চাহিদা বাড়ায় প্রতিটি ফলের দামই অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন কঠোর লকডাউনের কারণে সরবরাহ কম। বাইরে থেকে ফলের গাড়ি আসতে পারছে না। আমদানি প্রায় নেই বললেই চলে। তাই দামও বেশি। রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী জাবেদ আলী বলেন, রমজানের প্রথমদিন থেকেই কঠোর লকডাউন। বাজারে ফলের সরবরাহ অন্যান্য যে কোনো সময়ের চেয়ে কম। আর রোজার কারণে এখন ফলের চাহিদাও বেশি। তাই প্রতিটি ফলের দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। আর আপেল, কমলা, আঙ্গুর খেজুরের মতো ফলগুলো অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু লকডাউনে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই মৌসুমি ফলের পাশাপাশি এসব ফলের দামও বেড়েছে। রাজশাহী মহানগরের সাহেব বাজার, সোনাদীঘির মোড়, লক্ষ্মীপুর, গোরহাঙ্গা রেলগেইট ও শালবাগান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে। মৌসুমি ফলের চাহিদাই এখন বেশি। কিন্তু অন্য ফলের চেয়ে মৌসুমি ফলের দাম কম হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র উল্টো। বাজারে পর্যাপ্ত তরমুজ, আনারস, পেয়ারা ও বাঙ্গিসহ অন্যান্য দেশি ফল রয়েছে। কিন্তু দাম আকাশছোঁয়া! সবচেয়ে বেশি চাহিদা এখন রসালো ফল তরমুজের। সারাদিন তীব্র গরমে রোজা থাকার পর তরমুজের এক কামড়; রোজাদারের মনে যেন প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। কিন্তু সেই তরমুজও এখন সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালের বাইরে। এক মাসের বেশি সময় থেকে বাজারে তরমুজ উঠছে। কিন্তু দাম এখনও দাম ৪০ টাকা কেজি। যদিও একটু খারাপ মানের তরমুজগুলো কোথাও কোথাও ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফলের বাজারে ৫০ টাকা কেজির আনারস এখন ৮০ টাকা কেজি, ৭০ টাকা কেজির থাই পেয়ারা ১২০ টাকা কেজি, ২০ টাকা হালির কলা ৪০ টাকা, ১৫০ টাকা কেজির আতা ফল ২০০ টাকা, ২৫ টাকা পিসের বাঙ্গি ৪০ টাকা, ১০০ টাকা জোড়ার ডাব ১৬০ টাকা এবং ৪০ টাকা হালির লেবু ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বছরের নিয়মিত ফল হিসেবে পরিচিত খেজুর ১৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, আঙ্গুর ২৫০ টাকা কেজি, আপেল মানভেদে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, কমলা ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, মাল্টা প্রকার ভেদে ১০০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি, বেদেনা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, নাশপাতি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি, ১০০ গ্রাম চেরিফল ২৫ টাকা হলেও শনিবার ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মহানগরীর গোরহাঙ্গা রেলগেইট এলাকায় ফল কিনতে আসা সুলতানাবাদ এলাকার হাফিজ উদ্দিন বলেন, এবার রমজানের শুরু থেকেই রাজশাহীতে দাবদাহ বইছে। গরমের তীব্রতায় মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। তাই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ ইফতারে ফল রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যে হারে ফলের দাম বেড়েছে তাতে সব ধরনের ফল এখন সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালের বাইরে। বাজারে মৌসুমি ফলের দামও বেশি। এতে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে পারছেন না। এরপরও অনেকে ইফতারের প্লেটে একটি বা দুটি ফল রাখার চেষ্টা করছেন৷ এজন্য বাধ্য হয়েই বেশি দামে ফল কিনছেন বলেও মন্তব্য করেন।