একাত্তরে আলমগীর

একাত্তরে আলমগীর
বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তিতুল্য চলচ্চিত্রকার আলমগীর একাধারে একজন অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, উপস্থাপক ও কণ্ঠশিল্পী। আজ (৩ এপ্রিল) এই বরেণ্য শিল্পীর জন্মদিন।১৯৫০ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন আলমগীর। তার আদি নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। ১৯৭৩ সালে অভিনয়ে এসে প্রায় চার দশকে ২৩০টি ছবিতে অভিনয়, ৭টি ছবি নির্মাণ এবং নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননাও পান তিনি।আলমগীর বলেন, অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন সবার মতো আমারও ছিল। তবে আমি গায়ক হতে চেয়েছিলাম। মা-বাবার ইচ্ছা ছিল আমি ডাক্তার হই। একসময় ছবিতে প্লে-ব্যাক করতে চলচ্চিত্র নির্মাতা সফদর আলী ভূঁইয়ার অফিসে গেলাম। তিনি আমাকে গাইতে বললেন। চোখ বন্ধ করে গাইলাম। তিনি বললেন, তোমার এক্সপ্রেশন খুব সুন্দর। তুমি চেষ্টা করবে নায়ক হতে। ছোটবেলায় দিলীপ কুমার, উত্তম কুমার আর পরে রাজ্জাক সাহেবের ছবি দেখতাম। উত্তম কুমারের স্টাইল, ফ্যাশন, কথা বলার ভঙ্গিমা বেশ ভালো লাগত। বলতে পারি উত্তম কুমারের অনুপ্রেরণায় অভিনয়ে এসেছি। তবে উত্তম কুমার হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। চলচ্চিত্রে আসার ১০-১৫ বছর পর ঝুঝতে পারলাম উত্তম কুমার হওয়ার চেষ্টা করা যায় কিন্তু হওয়া যায় না। কারণ উত্তম কুমার ওয়ান পিস। এই বোধ থেকেই বলতে পারেন নিজের মতো করে অভিনয় জীবনের পথ চলা শুরু করলাম।  চলচ্চিত্র জীবনের কথা বলতে গিয়ে নানা স্মৃতির ঝাঁপি খুলে ধরেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। বলে চলেন নানা ঘটনার কথা। তিনি বলেন, এই উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার সঙ্গে ‘শিল্পী’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ছবির নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম সাহেব যখন প্রস্তাব দেন তখন সঙ্গে সঙ্গে রিফিউজ করি। কারণ আমার সময় ছিল না। শেষ পর্যন্ত রুনা লায়লা নিজেই আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। তার অনুরোধেই শেষ পর্যন্ত শিল্পী ছবিতে অভিনয় করি।  নিজের সম্পর্কে আলমগীর বলেন, আমি খুব গোছালো একজন মানুষ। সুখ একটি আপেক্ষিক শব্দ। সুখের অর্থ কি? এর উত্তর কেউ জানে না। সুখের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। কারও জীবনে পূর্ণ প্রাপ্তি আসে না। পূর্ণতার জন্য শুধুই সাধনা করে যেতে হয়। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং দর্শকপ্রিয়তা, দুটিই আমি পেয়েছি। দুটি দুই রকম অর্থ বহন করে। দর্শকের ভালোবাসা হলো অনুপ্রেরণা। এতে কাজ নিয়ে পথ চলা সহজ হয়। জনগণ ছাড়া বেসিক্যালি আমরা শূন্য। আর জাতীয় স্বীকৃতি প্রতিটি শিল্পীর পরম কাম্য। প্রতিটি শিল্পীর জীবনে এই স্বীকৃতি বিশাল অবদান রাখে, দায়বদ্ধতা বেড়ে যায়। কিন্তু জনগণই আমাদের সবকিছু।  সাফল্যের সূত্র প্রসঙ্গে আলমগীর বলেন, পৃথিবীতে কোনো জিনিসই সহজ এবং সস্তা নয়। যে কোনো ক্ষেত্রে সফলতা পেতে সাধনার বিকল্প নেই। কাজ করতে হবে সিনসিয়ারলি। ছোটবেলা থেকে একটি জিনিস জেনেছি, আর তা হলো- গাছ যত বড় হয় গাছের ডালপালা তত ঝুঁকে যায়। কিন্তু আমরা যত বড় হই ততই যদি বড়াই করতে থাকি তাহলে সফল হতে পারব না। সাধনা হলো সাফল্যের সবচেয়ে বড় সোপান। সাধনা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা, এসব কিছু মিলিয়ে হলো সাফল্য। এটি সবার এবং সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।  তিনি বলেন, সবাই মনে করে আমি খুব রাশভারী লোক। আসলে আমি রাশভারী নই। সময় উপগী একজন মানুষ। যখন যেখানে যেমন পরিস্থিতি থাকে আমি সেই পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি। মানুষের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারি। আমার সম্মানবোধ অনেক বেশি। যেখানে আমার সম্মান থাকবে না মনে হয় সেখান থেকে সবসময় দূরে থাকি।  নির্মাণ এবং অভিনয় প্রসঙ্গে এই কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার বলেন, কোনোটিই আমার কাছে কষ্টের নয়। তবে অভিনয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এগুলো হলো ক্রিয়েটিভ বিজনেস। নিজেকে অভিনেতা দাবি করতে খুব কষ্ট হয়। আমি নিজেকে অভিনেতা হিসেবে মূল্যায়ন করতে গেলে কোনো রকমে টেনেটুনে পাস মার্ক পাব। অভিনেতা দাবি করার মতো অবস্থা আমাদের দেশের কোনো শিল্পীর আছে কিনা জানি না। আমার তো নেই। অভিনয়ের বিশালতা এবং এর ব্যাপ্তি এত বড় যে, তা একজনের পক্ষে একজনমে ধারণ করা সম্ভব নয়। এর জন্য হয়তো শত জনম লাগবে। তা পাব না। কারণ জন্ম তো মাত্র একবারই। নির্মাতা হিসেবে আমি কখনই হ্যাপি নই। হ্যাঁ, আমার নির্মিত ছবিগুলো হিট হয়েছে। আমি আরেকটি ছবি নির্মাণ করব। আসলে ছবি হিট হবে এমন আশা নিয়ে নির্মাণ করি না।নতুন প্রজন্মের প্রতি বরেণ্য শিল্পী বলেন, নতুন প্রজন্মকে বলব তোমরা সাধনা কর। চলচ্চিত্রকে আগে ভালোবাসো আর নিজের মধ্যে ধারণ করো। চলচ্চিত্র এমন একটি জায়গা যেখানে অর্থের পেছনে ছুটলে নিজে এবং চলচ্চিত্র ধ্বংস হবে। আর চলচ্চিত্রকে সাধনা ও ভালোবাসা দিয়ে ধারণ করলে অর্থ তোমাদের পেছনে ছুটবে। এতে তোমাদের ও চলচ্চিত্রের উন্নয়ন হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন