প্রদীপকে মামলা সাজানোর বুদ্ধি শিখিয়েছিলেন সাবেক এসপি বকশ

প্রদীপকে মামলা সাজানোর বুদ্ধি শিখিয়েছিলেন সাবেক এসপি বকশ

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনা সামাল দিতে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ পরামর্শ নেওয়ার জন্য ফোন করেছিলেন এক সাবেক পুলিশ সুপারকে। তিনি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি, চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ও সাবেক পুলিশ সুপার মো. আল্লাহ বকশ। সিনহার মৃত্যুর পর কোন কোন ধারায় কীভাবে মামলা করতে হবে, তিনি শিখিয়ে দিয়েছিলেন প্রদীপ দাশকে।

অবশ্য এ ধরনের বক্তব্যের জন্য তিনি অনুতপ্ত বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারও দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, আল্লাহ বকশ ছয় বছর আগে পুলিশ সুপার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তার ছোট ভাই খোদা বকশ চৌধুরী বিএনপি সরকারের আমলে পুলিশের আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় গ্রেনেড হামলা মামলায় তিনি সাজা পান। দীর্ঘদিন কারাভোগ করে বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।

আল্লাহ বকশের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়নে। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার মুরগির খামার এলাকায় নিজস্ব ভবনে বসবাস করছেন।

পুলিশের গুলিতে সিনহা নিহত হওয়ার পর ওসি প্রদীপের সঙ্গে এক ব্যক্তির ফোনালাপের রেকর্ড ফাঁস হয়। ঐ রেকর্ডে ওসি প্রদীপকে এই ‘হত্যাকাণ্ড’ থেকে পরিত্রাণের উপায় বাতলে দেন অপর প্রান্তের ব্যক্তি। পরে জানা যায়, প্রদীপকে পরামর্শ দেওয়া ঐ ব্যক্তি সাবেক পুলিশ সুপার মো. আল্লাহ বকশ।

সাবেক এসপি আল্লাহ বকশ ও ওসি প্রদীপের মধ্যে কথোপকথন :

আল্লাহ বকশ :হ্যালো!

ওসি প্রদীপ : স্যার, আদাব স্যার।

আল্লাহ বকশ : হ্যাঁ।

প্রদীপ :স্যার, আমি ওসি টেকনাফ প্রদীপ, স্যার।

আল্লাহ বকশ :হ্যাঁ, কী খবর প্রদীপ, কোরবানির দিন গরুর মধ্যে তুমি কী…

ওসি প্রদীপ :স্যার, একটা মহাবিপদে পড়ছি, আপনার সাহায্য দরকার।

আল্লাহ বকশ :বলো বলো।

প্রদীপ :এখন আমরা স্যার একটা ১৫৩, ১৮৬ ও ৩০৭-এ মামলা নিছি, স্যার।

আল্লাহ বকশ :ওয়ান ফিফটি থ্রি?

প্রদীপ :স্যার, থ্রি ফিফটি থ্রি।

আল্লাহ বকশ :থ্রি ফিফটি থ্রি সরকারি কর্মচারীর কাজে বাধা, আরেকটা হচ্ছে…

প্রদীপ :আরেকটা হচ্ছে ১৮৬, পুলিশের কাজে বাধা।

আল্লাহ বকশ :আর্মিদের ইন্টিমেশন দিছ কি না?

ওসি প্রদীপ :এরপরে দিছি স্যার আমরা। আর্মিরে জানাইছি। আর্মির লোকজন আসছে, সবাই আসছে।

আল্লাহ বকশ :এ কি আর্মির নাকি?

প্রদীপ :অবসরপ্রাপ্ত, স্যার।

আল্লাহ বকশ :ও, তাইলে এত ডরের কী আছে?

প্রদীপ :এখন স্যার, ও মারা গেছে, ইনজুরড অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছে।

আল্লাহ বকশ :এর সঙ্গে যে লোকটা ছিল, ঐটা কী?

প্রদীপ :ঐটা স্যার, একটা ছাত্র, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির। সে বলছে যে আমরা রাতের বেলা পাহাড়ের সিন নেওয়ার জন্য… ওরা নাকি স্যার ইউটিউবের একটা চ্যানেল করার জন্য আসছে ভ্রমণের ওপরে।

আল্লাহ বকশ :তোমরা তো অবস্ট্রাকশন দিছ, অবস্ট্রাকশন ভায়োলেট কইরা গেছে, গাড়ি চালাইছে।

গাড়িওয়ালারে অ্যারেস্ট করছ কিনা?

প্রদীপ :স্যার, গাড়িচালক তো ও নিজেই।

আল্লাহ বকশ : ও আচ্ছা আচ্ছা, গাড়ি জব্দ করছ কি না?

প্রদীপ : জি স্যার, করছি।

আল্লাহ বকশ : আচ্ছা তোমরা যে বাধা দিছ, ওভারটেক কইরা গেছে, এইটার সাক্ষী আছে কি না পাবলিক?

প্রদীপ : সাক্ষী আছে স্যার।

আল্লাহ বকশ : সাক্ষী থাকলে মামলা কী নিছ বলো।

প্রদীপ : মামলা নিছি স্যার ১৮৬, ৩৫৩, ৩০৭

আল্লাহ বকশ : প্রেয়ার দিয়া দিবা যে একটা মার্ডার হইয়া গেছে।

ওসি প্রদীপ : আর আলাদা কোনো কেস দিতে হবে না, স্যার?

আল্লাহ বকশ : আরেকটা কেস কী নিবা?

প্রদীপ : আরেকটা কেস আমরা কী নিব? ও যে সদর হাসপাতালে মারা গেছে স্যার। সদর হাসপাতালের বিষয়ে একটা ইউডি কেস নিয়ে নিব স্যার?

আল্লাহ বকশ : আমার তো মনে হয় সদর থানারে দিয়া একটা ইউডি কেস করাইয়া রাখো।

প্রদীপ : ভালো হবে না, স্যার?

আল্লাহ বকশ : আমার মনে হয় ভালো হয়। আর্মির লোক তো পরে টানাটানি করে কি না। আর নাইলে তো

প্রদীপ : না হলে তো স্যার, ওরা স্যার লাশ নিয়ে গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে যে কোনো সময়। আমরা একটা মামলা করে ফেললে ঐ মামলাটা ট্যাগ করা যাবে।

আল্লাহ বকশ : তাহলে তোমরা একটা কাজ করো না, ৩০৪-এ-ও একটা মামলা নিয়া নিতে পারো।

প্রদীপ : ৩০৪-এ আমরা কী লিখব স্যার?

আল্লাহ বকশ : লেখবা যে, ইয়ার মধ্যে ইয়া হইছিল। আসামি হাওয়েভার মারা গেছে। এ কারণে মামলাটা রুজু করা হইল। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

ওসি প্রদীপ : স্যার, ৩০৭-এ এখানে আসামির কলামে কী লিখব?

আল্লাহ বকশ : না, আরেকটা সেপারেট মামলার জন্য বলছি। যেহেতু আসামি মারা গেছে, তাই এ মৃত্যুর জন্য মামলা করা হলো।

ওসি প্রদীপ : স্যার, মামলা নিব যে আসামির কলামে নাম লিখতে হবে না?

আল্লাহ বকশ : পুলিশে গুলি করছিল, বুজছি তো। এই এজাহারটা পুরা লিখবা, যে এই এই কারণে তাকে অবস্ট্রাকশন করে আটকানো হইছিল। আটকানো হওয়ার পরে এই মামলা রজু হইছে। হাসপাতালে পাঠানোর পর সেখানে সে মারা গেছে। যেহেতু মানুষ মারা গেছে, তাই তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মামলা রজু করা হলো, ৩০৪-এ।

প্রদীপ : আসামি অজ্ঞাত।

আল্লাহ বকশ : এইটা নিয়া রাখো। তাহলে এরা কোর্টে কেইস করলে এইটা ট্যাগ হইয়া যাবে।

প্রদীপ : স্যার, ৩০৪ আমি নিব নাকি সেখানে ডিউটি অফিসার দিয়ে নিয়ে রাখব সদর থানা দিয়ে?

আল্লাহ বকশ : সদর থানায় লইব নাকি তোমার মামলা?

প্রদীপ : সবকিছু লেখার পর লেখবো যে সদর থানার মধ্যে মারা গেছে, স্যার।

আল্লাহ বকশ : হ্যাঁ, হ্যাঁ। তোমার এজাহারটা হুবহু লেইখা যাইবা, যে এই এই মামলার আসামি, তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হইয়াছিল। যেহেতু আসামি মারা গেছে হাসপাতালে, সেহেতু সে মারা গেছে হত্যা মামলা রুজু করা হলো। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এই বর্ণনা হুবহু লেখবা।

প্রদীপ : সবকিছু লিখে লাস্টে এটা লিখব।

আল্লাহ বকশ : যেহেতু মারা গেছে, এসব ঘটনার কারণে ৩০৪-এ হত্যা মামলা রুজু করা হলো। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

প্রদীপ : ঠিক আছে স্যার, আসসালামু আলাইকুম।

আল্লাহ বকশ : থ্যাংক ইউ।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাঞ্ছারামপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় স্কুলছাত্র খুন

টেকনাফে যৌথ অভিযানে পরিত্যক্ত ওয়ান শুটার গান উদ্ধার করেছে