অনুপ বালো : ৪ হাজার ৫০০ ইউনিয়ন পরিষদকে জ্ঞান-ভিত্তিক উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার কাজ করছে সরকার। ইতোমধ্যে ইউনিয়নের সচিব নিয়োগেরও কার্যক্রম শুরু করেছে। পরিষদের সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হবে তিন হাজার ব্যক্তিকে। এছাড়া স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে গ্রাম পুলিশের সুযোগ-সুবিধা ও কর্মপরিধিও বাড়ানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্র জানায়।
সবমিলিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের (২০২১ সালের) মধ্যেই একটি তথ্য ও জ্ঞান-ভিত্তিক দেশ প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলেছেন, সব ইউনিয়ন পরিষদকে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য সরকার কাজ করছে। পাশাপাশি এই সব কেন্দ্র সরকারি-বেসরকারি তথ্য ও সেবাসমূহ জনগণের কাছাকাছি নিয়ে যেতে, প্রযুক্তি বিভেদ দূর করতে ও সব নাগরিককে তথ্য প্রবাহের আধুনিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখতে পারে এ লক্ষ্যেও সরকার কাজ করছে বলে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ও অনুসন্ধানে এতথ্য পাওয়া গেছে।
ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক কেন্দ্র ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিষদকে নতুন মাত্রা প্রদান করেছে। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয় থেকে এবং নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)’র প্রশাসক মিস হেলেন ক্লার্ক ভোলা জেলার চর কুকরিমুকরি ইউনিয়ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের সব ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) একযোগে উদ্বোধন করেন। ইউডিসি’র মূল লক্ষ্য হলো ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন পাঁচটি স্তরের জনপ্রতিনিধিদের মাসিক সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি করার পর এবার ইউনিয়ন পরিষদকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মাধ্যমে জনগণের সেবা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকারের অন্যতম এ স্তরটির জনবল সংকট দূর করে গতিশীল করা হবে। এছাড়া যেসব ইউনিয়নে কমপ্লেক্স ভবন নেই, সেখানে পর্যায়ক্রমে আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হবে।
এর আগে গত বছর ১০ জানুয়ারি স্থানীয় সরকারের আওতাধীন সব সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাসিক সম্মানী ভাতাও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদকে জ্ঞান-ভিত্তিক উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার আওতায় দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা সরকারি খাত থেকে বেতন-ভাতা পাবেন। সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে এরই মধ্যে এসব পদে যারা নিয়োগ লাভ করেছেন, তাদের চাকরির অনিশ্চয়তা দূর হলো। এত দিন এরা প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। তাদের চাকরিও ছিল অস্থায়ী। চেয়ারম্যান ইচ্ছা করলেই যাকে খুশি নিয়োগ দিতেন, আবার বাদও দিতে পারতেন। এখন এ ক্ষমতা শুধু সরকারের হাতে থাকবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের এ প্রস্তাব এরই মধ্যে অর্থ বিভাগ অনুমোদন করেছে। প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিও তা অনুমোদন করেছে। এখন স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে এটি কার্যকর করা বাকি রয়েছে।
প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব পদকে পর্যায়ক্রমে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হবে। চার হাজার ৫৫৩টি পদের মধ্যে প্রথম বছরে এক হাজার, দ্বিতীয় বছরে এক হাজার, তৃতীয় বছরে এক হাজার ২০০ ও চতুর্থ বছরে এক হাজার ৩৫৩টি পদ রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণসহ টিআর, কাবিখা, এডিপি, ভিজিডি, ভিজিএফের মতো বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। পাশাপাশি অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন রকমের সনদ প্রদান, গ্রাম আদালতের কার্যক্রমও ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু স্থায়ী জনবল না থাকায় এসব কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসব সমস্যা সমাধনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রম বেগবান করতে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করে। ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের একটি পদ সৃষ্টির সুযোগ রাখা হয়েছিল। তৃণমূলে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার অনুযায়ী দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদে কম্পিউটার অপারেটর পদ সৃষ্টি করা হয়।
জেলা প্রশাসন থেকে চাওয়া তালিকা অনুযায়ী এখনও বাকি আছে তিন হাজার ১৩০টি পদ। এই পদগুলো পূরণের জন্য শিগগিরই পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। তবে এবার জেলা অনুযায়ী ভাগ না করে বিভাগ অনুযায়ী নিয়োগ আসছে।
উল্লেখিত পদের ভেতরে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ দেয়া হবে চট্টগ্রামে ৫৮৪টি, রাজশাহীতে ৫২১টি, খুলনায় ৪৯০টি ও বরিশাল বিভাগে ৫০৩টি পদে। সবচেয়ে কম পদ আছে সিলেট বিভাগের জন্য। এসব পদে যে কোনো বিষয়ে স্নাতক পাস প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। বেতন হবে জাতীয় স্কেলের নয় হাজার ৩০০ থেকে ২৬ হাজার ৫৯০ টাকা গ্রেডে।
সরকার ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জনগণের সেবা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এ সম্পর্কে স্থানীয় সরকার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবদুল মালেক জানান, পরিষদের জনবল সংকটসহ যেসব সমস্যা রয়েছে, তা অচিরেই দূর করা হবে।
এ বিষয়ে দক্ষিণ মানিকগঞ্জের ভাড়ারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো.আব্দুর কাদের বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ডিজিটাল ইউনিট সেন্টারও গঠন করে দিয়েছে। সব বিষয়ে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন হচ্ছে। সামনে ইউনিয়ন ভবন হবে। জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
পুটাইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বলেন, আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ আধুনিক হয়েছে। কোন সমস্যা নেই। শুধু উপজেলা সদরের একটি সড়ক মেরামত হয়নি গত ৩৪ বছরেও। সড়কটি হলো বালিরটেক-পুটাইল পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৪ কিলোমিটার। এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম একটি ডিও লেটার দিয়েছেন। স্থানীয় সরকারের মানিকগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার হবে। তিনি বলেছেন, সামনের দিনগুলো আমাদের ইউপি’র কার্যক্রম দ্রুতগতিতে কাজ হবে এবং তথ্য ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের ইউপি চিহ্নিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আব্দুল জলিল।