বেড়েই চলেছে চালের দাম

বেড়েই চলেছে চালের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক :দেশে সরবরাহের ঘাটতি না থাকলেও চালের দাম বাড়ছেই। কেজিতে ২-৩ টাকা করে বাড়তে বাড়তে এখন মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। গতবছরের এই সময়ে দাম ছিল ৩৫-৩৮ টাকা। সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর হিসাব মতে গত একবছরে মোটা চালের দাম বৃদ্ধির হার ৩৭ শতাংশ। বেড়েছে মাঝারি ও চিকন চালের দামও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে মোটা, মাঝারি ও চিকন চাল নামে পরিচিত নাজিরশাইল ও মিনিকেট- দু’ধরনের চিকন চালের দামই বেড়েছে। মাঝারি মানের চিকন চালের কেজি এখন ৬০ টাকা। নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম ৬৬ টাকার বেশি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে ৬৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া চাল এ সপ্তাহে ৬৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে স্বর্ণা নামের মোটা ও মাঝারি চালের দামও বেড়েছে একই হারে। ব্যবসায়ীরা আগের সুরেই বলছেন, সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কমবে। চালের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির অনুমতিও দিয়েছে সরকার। দেরিতে হলেও কমানো হয়েছে চালের আমদানি শুল্ক। তবে এখনও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। এ প্রসঙ্গে চাল ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী জানিয়েছেন, ধানের মূল্য বৃদ্ধির কারণেই মূলত চালের দাম বাড়ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন, মিলাররা নয়। তিনি সিন্ডিকেটের অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, ধান-চালের ব্যবসা অনেক বড়। সিন্ডিকেট করা সম্ভব নয়। এ ব্যবসা যদি চার-পাঁচজন করতো তা হলে সিন্ডিকেট করা যেতো। এদিকে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আমদানি করা সব চাল ১৫ মার্চের মধ্যে বাজারে আনার নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার খাদ্য অধিদপ্তরকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আমদানির জন্য অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যারা ইতোমধ্যেই এলসি খুলেছেন কিন্তু বাজারজাত করতে পারেননি, তাদের এলসি করা সম্পূর্ণ চাল বাজারজাতকরণের জন্য ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হলো। উল্লেখ্য, বিভিন্ন শর্তে বেসরকারি পর্যায়ে ৩২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই ভারত থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে আমদানি করা প্রায় দেড় লাখ টন চাল দেশে পৌঁছেছে। ভারতের বাইরে অন্য আরও দেশ থেকে আমদানি করে মজুদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। এসব চাল বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে মিলাররা জানিয়েছেন, এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় যে দাবি করেছে তা সত্য নয়। তারা বলেছেন, এ বছর বন্যায় ভেসে আসা পলির কারণে ধানের গাছ উর্বর হলেও উৎপাদন কম হয়েছে। প্রতি একরে ৪০ মণ হওয়ার কথা থাকলেও ২৫-২৬ মণের বেশি উৎপাদন হয়নি। এ কারণে দেশের বিভিন্ন বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি হয়েছে ১২শ’ টাকারও বেশি দরে। এ বিষয়ে সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, চালকল মালিকরা (মিলার) নানা কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে। উৎপাদনের যে ঘাটতি হয়েছে তা মেটাতে সরকার ৫-৬ লাখ টন চাল আমদানি করবে। সরকারি গুদামেও চাল কমে গেছে। গত বছর এই সময়ে সরকারি গুদামগুলোয় ১৩ লাখ টনের মতো খাদ্যশস্য থাকলেও এবার তা ৭ লাখ টনে নেমেছে। কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মিলার, আড়তদাররা এখনও ধান কিনছে। ধানের দাম ও চালের দাম দুটিই তারা বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, চালের ঘাটতি আমাদের নেই। কৃষিমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, চলতি বছর দুই দফা বন্যার কারণে আউশ ও আমন ফলনের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে উৎপাদনের যে পরিসংখ্যান সরকারের হাতে আছে, তাতে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের অন্য এক তথ্যানুযায়ী, গত এক দশকে প্রতি কেজি মাঝারি মানের চালের গড় দাম ছিল ৪১ টাকা, যা এখন ৬০ টাকা। গত অর্থবছরও (২০১৯-২০) প্রতিকেজির গড় দাম ছিল ৫৬ টাকা। গত এক দশকের মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আগ পর্যন্ত দাম ছিল সর্বোচ্চ ৪৬ টাকা। হঠাৎ করেই পরের বছর ৫৩ টাকায় ওঠে। পরে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দাম এক টাকা কমলেও আবার লাগামছাড়া হয় দাম। তথ্য বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর পরবর্তী বছরগুলোতে চালের দাম ছিল যথাক্রমে ৫৩ টাকা, ৫৫ টাকা, ৫৭ টাকা ও ৫৬ টাকা। এদিকে কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এক দশক আগেও দেশে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৩৫ লাখ টন, যা এখন (২০১৯-২০ অর্থবছর) তিন কোটি ৮৭ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পরে প্রতিবছর চালের উৎপাদন প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টন করে বেড়েছে।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন