নিজস্ব প্রতিবেদক : ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গণতন্ত্রের সূচকে ‘হাইব্রিড রেজিম’ বা মিশ্র শাসনের দেশের তালিকায় আবারো জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশ এ বছর চার ধাপ এগিয়েছে। খবর বিবিসির। সাধারণত সেইসব দেশকে হাইব্রিড রেজিম বলে বর্ণনা করা হয় যেসব দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা রয়েছে, কিন্তু সেখানে নিয়মিত নির্বাচন হলেও রাজনৈতিক দমন পীড়নও চলে। অর্থাৎ এসব দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা রয়েছে। ব্রিটেনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ইকোনোমিস্টের গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগ ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। ২০০৬ সাল থেকে ইআইইউ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। প্রথমবার প্রকাশিত তালিকার পর এ বছরেই বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো অবস্থান পেয়েছে। যদিও সংস্থাটির বক্তব্য, বিশ্বের দেশগুলোর গণতন্ত্রের গড় স্কোর আগের বছরের তুলনায় কমে গেছে। সংস্থাটির গত বছরের গণতন্ত্রের তালিকায় ১৬৫ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ছিল ৮০তম। তবে এ বছরের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান চার ধাপ এগিয়ে হয়েছে ৭৬। তাদের বেঞ্চ মার্ক ১০ পয়েন্টের মধ্যে এই বছর বাংলাদেশের স্কোর ৫ দশমিক ৯৯। যখন ২০০৬ সালে প্রথম গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, তখন বাংলাদেশের গড় স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। সংস্থাটি বলছে, বিশ্বের ১৬৫টি দেশের ওপর করা এই তালিকায় বাংলাদেশের মতো ‘হাইব্রিড রেজিম’ রয়েছে ৩৫টি দেশে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় গণতন্ত্রের বিচারে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। তালিকায় ভারতের অবস্থান ৫৩তম আর শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৬৮তম। ভুটান রয়েছে ৮৪তম অবস্থানে, নেপাল ৯২তম, পাকিস্তান ১০৫তম, মিয়ানমার ১৩৫তম অবস্থানে। গণতন্ত্র সূচকের তালিকায় ৯ দশমিক ৮১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডস। যুক্তরাষ্ট্রের স্থান হয়েছে ‘ক্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের’ দেশের তালিকায়। তালিকার সবচেয়ে নিচে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। এ ছাড়া আরও আছে ডিআর কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকা, সিরিয়া, চাঁদ ইত্যাদি দেশ। পাঁচটি মানদণ্ডে ১০ পয়েন্ট ধরে বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি বিচার করে প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এগুলো হলো- নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারের সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার। প্রতিবেদনে দেশগুলোর গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। তা হলো- পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, মিশ্র শাসন (হাইব্রিড) ও স্বৈরশাসন। সূচকে কোন দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলেই পূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। ৬ থেকে ৮ হলে ক্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, ৪ থেকে ৬ হলে মিশ্র শাসন আর ৪ এর নিচে হলে স্বৈরশাসন বলে ধরে নেয়া হয়। বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থাকে ইআইইউ তৃতীয় শ্রেণির অর্থাৎ মিশ্র শাসনের অন্তর্ভুক্ত করেছে। ‘হাইব্রিড রেজিম’-এর বৈশিষ্ট্য কী? একটি দেশ তার কোন কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য এই তালিকায় পড়ে – ইআইইউ-এর গবেষণা পদ্ধতিতে সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে যা বলা হয়েছে তা হলো যেসব দেশে নির্বাচনে বেশ অনিয়মের ঘটনা ঘটে, যা নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বিরোধী দল এবং প্রার্থীর ওপরে সরকারি চাপ খুবই সাধারণ ঘটনা ঘটে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সরকারের সক্রিয়তা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের বিষয়ে মারাত্মক দুর্বলতা দেখা যায়, যা ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকেও বেশি। দুর্নীতির বিস্তার প্রায় সর্বত্র এবং আইনের শাসন খুবই দুর্বল। সিভিল সোসাইটি দুর্বল। সাধারণত সাংবাদিকরা হয়রানি ও চাপের মুখে থাকে এবং বিচার ব্যবস্থাও স্বাধীন নয়। এদিকে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এই প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘মনগড়া’ বলে বর্ণনা করেছে বাংলাদেশ সরকার। কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক এই প্রতিবেদনের বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি খুব ভালো। নিয়মিত নির্বাচন হয়, গণতন্ত্রের সবরকম চর্চা হয়, বাক স্বাধীনতা রয়েছে। একে হাইব্রিড রেজিম বলার কোন কারণ নেই। তিনি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সমালোচনা করে বলছেন, তারা এর আগেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে। তারা যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটা ভিত্তিহীন ও মনগড়া একটি প্রতিবেদন।