রিনা পারভীন, নলডাঙ্গা (নাটোর) প্রতিনিধি :নাটোরের হালতি বিলের বিস্তৃর্ন এলাকা জুড়ে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনে বোরো ধানের আগাম চারা রোপন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১৫০ জন কৃষকের ১৫০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে সমলয় চাষাবাদ স্কীম। এজন্যে কৃষকদের ১২ লক্ষাধিক টাকা প্রণোদনা প্রদান করছে সরকার। উদ্দেশ্য কৃষকদের সংগঠিত করে নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে কৃষকদের মেলবন্ধন তৈরী করা। সোমবার হালতি বিলের পূর্ব মাধনগর এলাকায় রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে ধানের চারা রোপন কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করতে বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্র্মীরা উপস্থিত হন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার, নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মেহেদুল ইসলাম, নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ ফৌজিয়া ফেরদৌস প্রমুখ। ট্রেতে পলিথিন মোড়ানো হাউজে পরম যত্নে তৈরী করা বীজতলা মাত্র ২২ দিনে চারা রোপনের উপযোগী হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ চারাগুলো রোপন করা হচ্ছে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে। রোপনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে লাইন লোগো পদ্ধতি-যাতে করে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠে ধানের চারা, সুবিধা হয় পরিচর্যার। পরবর্ত্তীতে পোকা মাকড়ের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহার করা হবে পার্চিং, খরচ কমাতে ব্যবহার করা হবে আধুনিক সেচের এডাব্লুডি (পর্যায়ক্রমিক শুষ্ক ও ভেজা) পদ্ধতি, সার ব্যবহার যথাযথ ও সীমিত করতে ব্যবহার করা হবে সুষম সার, অনায়াসে আগাছা নিধনে থাকবে উইডার মেশিন আর সর্বোপরি যুগপৎভাবে ধান কর্তন, মাড়াই এবং প্যাকিং কাজে ব্যবহার করা হবে কম্বাইন্ড হারভেস্টার। কৃষকের জমি এবং সেচের খরচ ছাড়া সরকারের এই প্রণোদনা কার্যক্রমে ধানের বীজতলা তৈরী থেকে শুরু করে সমূদয় ব্যয় নির্বাহ হরছে সরকার। নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি পূণর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে পাইলট এই স্কীমের কার্যক্রম মনিটরিং করছে কৃষি বিভাগ।
সুবিধাভোগী কৃষক আব্দুস সোবহান বলেন, আমরা বীজতলা থেকে মাত্র ২২ দিনে চারা রোপন করতে পারছি। সতেজ চারাগুলো মেশিনে রোপনের ফলে আহত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে খুব সহজেই জমিতে মানিয়ে যাবে। জীবনচক্রের বেশী সময় জমিতে থাকায় পূর্ণ পুষ্টি পেয়ে ধানের কুশির সংখ্যা বাড়বে, ধানের পরিমাণ হবে বেশী। অপর কৃষক আবুল হোসেন জানান, প্রতিবছর এলাকাতে বন্যা দেখা দেয়। ফলে ধান ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনাসহ ঐ সময় ধান কাটা শ্রমিকের অভাব এবং উচ্চ মূল্য প্রদান সমস্যার মুখোমুখী হতে হয় আমাদের। যান্ত্রিকীকরণের ফলে ঐসব সমস্যা থেকে আমরা রক্ষা পাবো বলে আশা করছি।কৃষক সাইফুল ইসলঅম মৃধা বলেন, বন্যা প্রবন হালতি বিলে আধুনিক এইসব যন্ত্রপাতি আর প্রযুক্তি পর্যবেক্ষণ আর অনুসরণ করে এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও উপকৃত হবেন।
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ ফৌজিয়া ফেরদৌস বলেন, সকল প্রযুক্তির সমাহারে গড়ে তোলা এই স্কীমকে সফল এবং মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে কৃষি বিভাগ সব রকমের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, সমবায়ের মডেল অনুসরণ করে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং সকল প্রযুক্তির সাথে কৃষকের মেলবন্ধন তৈরীতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। আশাকরি পাইলট এই স্কীম সফলতা লাভ করবে। ভবিষ্যতে জেলার অন্যান্য উপজেলাতে এই কর্মসূচী ছড়িয়ে পড়বে।