খুলনা: নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশনে গেলে সারি সারি নৌকা দেখে যে কারো চোখ আটকে যাবে। তবে, অনেক দিন পড়ে থাকতে থাকতে বেশিরভাগ নৌকাই নষ্ট হয়ে গেছে।যেগুলো নষ্ট হয়নি, সেগুলোও নষ্ট হওয়ার উপক্রম। শিবসা ও মরজাত নদীসহ আশপাশের নদীতে অবৈধভাবে সুন্দরবনে প্রবেশকারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় এসব নৌকা জব্দ করা হয়েছে।হড্ডা টহল ফাঁড়ি, চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের ঢাংমারী, চাঁদপাই, জিউধরা, শরণখোলার বগি, সুপাতি ও দুবলা ফরেস্ট স্টেশনেও এরকম জব্দ করা হাজারও নৌকা রয়েছে। এসব নৌকা বছরের পর বছর পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, সুন্দরবনের নদ-নদী ও খাল থেকে মাছ ও কাঁকড়া, গোলপাতা ও মধু সংগ্রহ করে বনজীবীরা। মৌসুমভিত্তিক (ইলিশ, শুঁটকি, গোলপাতা আহরণ, মধু সংগ্রহ মৌসুম) বনজীবীদের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ লাখের বেশি। তাদের মধ্যে অনেকেই পাস না নিয়ে অবৈধভাবে নৌকা ও ট্রলার নিয়ে বনে প্রবেশ করেন। তাদের আটক করে বন বিভাগ ও কোস্ট গার্ড। আটকের পর কিছু নৌকার তলা নষ্ট করে দেওয়া হয়, যাতে এ নৌকা নিয়ে আবার অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে।সুন্দরবন সংলগ্ন পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী এলাকার শাফায়াত বলেন, সুন্দরবনে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারীদের নৌকা, জাল বিভিন্ন সময় আটক করে বনবিভাগ। সেগুলো যেসব স্টেশনে রাখা হয় সেখানেই নষ্ট হয়েছে। সবচেয়ে বেশি নৌকা আটক রয়েছে নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশনে।করমজল প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবীর বলেন, ‘আটক হওয়া নৌকাগুলো যাদের, তারা এগুলো নেওয়ার উদ্যোগ নেন না। এ কারণে এগুলো পড়ে থাকতে থাকতে কাঠ পচে নষ্ট যায়। ’জানা গেছে, বনবিভাগ বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে বনের ভেতর ও সংলগ্ন এলাকা থেকে চোরাকারবারিদের ব্যবহৃত ট্রলার ও নৌকা আটক করে থাকে। ২০২০ সালে সুন্দরবন অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও খাল থেকে ৭৪টি ট্রলার ও ৪৭৩টি নৌকা আটক করা হয়েছে। অযত্ন অবহেলায় এসব ট্রলার ও নৌকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব ট্রলার ও নৌকা এখন স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীদের কাছে অনেকটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।জব্দ ট্রলার ও নৌকাগুলো নিলামে বিক্রি করলে চোরাকারবারি চক্রের সদস্যরা কম দামে কিনে তা আবার চোরাচালান কাজে ব্যবহার করবে, এমন ধারণা বনবিভাগের। নিলামের সুযোগে অবৈধভাবে গাছ কাটা ও কাঠ পাচারের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে ২০০৯ সাল থেকে আটক ট্রলার ও নৌকাগুলো নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে না।পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে যেসব নৌকা ও ট্রলার জব্দ করা হয়, তা স্টেশনগুলোতে রাখা হয়। ট্রলারগুলোর মামলা নিষ্পত্তি হলে মালিক নিয়ে যায়, কিন্তু নৌকা নিতে কেউ আসে না। এ কারণে নৌকাগুলো স্টেশনেই নষ্ট হয়ে যায়।