ঢাকা: এখনও জট কাটেনি অমর একুশে গ্রন্থমেলার। ঠিক কবে থেকে শুরু হবে এবারের বইমেলা সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি।এ কারণে মেলার তারিখ নির্ধারণ করতে রোববার মেলা পরিচালনা কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। যেখানে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ, প্রকাশক প্রতিনিধিদের পাশাপাশি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সকাল সাড়ে ১১টায় বাংলা একাডেমির সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।শনিবার (১৬ জানুয়ারি) এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, রোববার আমরা প্রকাশকদের সঙ্গে বৈঠক করে মেলার তারিখ নির্ধারণ করব। এর বাইরে আর কোনো তথ্য এই মুহূর্তে নেই।বাংলা একাডেমি সূত্র জানায়, এবারের মেলা শুরু হওয়া নিয়ে এখনও দোটানায় রয়েছে একাডেমি। কারণ, এখনও করোনা পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরুর ঘোষণায় মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।সূত্র জানায়, মেলা আয়োজনের জন্য বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে মার্চের ১৭ তারিখ নির্ধারণ করেছে। তবে ২৬ মার্চ মেলাস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। সে অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মেলা শুরুর পর দুই দিন বন্ধ থাকতে পারে।এপ্রিল মাস থেকে মেলা শুরুর একটি পরিকল্পনা বাংলা একাডেমির রয়েছে। কিন্তু ১২ এপ্রিল থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। রমজান মাসে বইমেলা সেভাবে জমে না ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।এর বাইরে বিকল্প হিসেবে মে মাসে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর মেলা আয়োজন করতে চায় বাংলা একাডেমি। সে সময়ের বড় প্রতিবন্ধকতা বৃষ্টি।এসব নানা ধরনের বিকল্পকে মাথায় রেখে মেলা আয়োজন নিয়ে রোববার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, রোববারের বৈঠকে আমরা থাকব। আমরা আশা করছি, মার্চের ১৭ তারিখ থেকে মেলা শুরুর। কারণ, ফেব্রুয়ারির মেলা মার্চে হতে পারে। কিন্তু এপ্রিল বা মে মাসের কথা বললে, আমরা প্রকাশকরা বসে সেই মেলায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।গত ১০ ডিসেম্বর বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ভার্চ্যুয়ালি বইমেলার আয়োজনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন লেখক-প্রকাশক-সাহিত্যিকরা। বাংলা একাডেমির এ সিদ্ধান্তকে ‘একতরফা’ ও ‘স্বেচ্ছাচারী’ বলে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন প্রকাশকরা।এ প্রেক্ষিতে ১৩ ডিসেম্বর সকালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রকাশকদের দুই সমিতি— বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নেতারা।বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভার্চ্যুয়ালি নয়, শারীরিক উপস্থিতিতেই আয়োজিত হবে ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তবে প্রথা অনুযায়ী, পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে এবারের বইমেলা শুরু হচ্ছে না। এর জন্য প্রকাশকদের কাছ থেকে প্রস্তাব চাওয়া হয় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে।এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ১৫ ডিসেম্বর শারীরিক উপস্থিতিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা আয়োজনের জন্য বাংলা একাডেমিকে লিখিত প্রস্তাব দেয় প্রকাশকদের দুই সংগঠন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি।