নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার দেশের কয়েকটি মহাসড়ক থেকে টোল আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর টোল আদায়ের জন্য প্রাথমিকভাবে দেশের ৬টি মহাসড়ক চিহ্নিত করেছে। তার মধ্যে জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল, টাঙ্গাইল-রংপুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ, গাবতলী-নবীনগর ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক থেকে টোল আদায়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা-মাওয়া-পটুয়াখালী মহাসড়কে টোল হার নির্ধারণের কাজ চলছে। সবার আগে ওই মহাসড়কটিতে টোল আদায় শুরু করা হতে পারে। বাকি মহাসড়কগুলোয় এখনো উন্নয়নকাজ চলমান বা প্রক্রিয়াধীন। উন্নয়নকাজ শেষে সেগুলোতে সওজ অধিদপ্তর পর্যায়ক্রমে সেসব মহাসড়কে টোল চালুর পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৮ লেনের মহাসড়ক চলতি বছরের মার্চে চালু করা হয়েছে। তার মধ্যে চার লেন করা হয়েছে অ্যাকসেস কন্ট্রোল মহাসড়কের আদলে। নেজন্য মহাসড়কটিকে এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে অভিহিত করছে সওজ অধিদপ্তর। ওই মহাসড়কটিতে টোল হার নির্ধারণের কাজ চলছে। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে ওই মহাসড়কে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি বিগত ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে চার লেনে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে মহাসড়কে থাকা ৩টি সেতু ও সীতাকুন্ডে একটি ওজন স্টেশনে টোল আদায় করা হচ্ছে। মহাসড়কটি আরো প্রশস্ত ও সার্ভিস লেন যুক্ত করার জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিস্তারিত নকশা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সড়কটি প্রশস্ত করার কাজ শেষ হলে টোল আদায় শুরু করার পক্ষে মত দিয়েছে সওজ অধিদপ্তর।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মতোই চালু হয় জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। ওই মহাসড়কও আরো প্রশস্ত ও সার্ভিস লেন যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উন্নয়ন শেষে মহাসড়কটি থেকে টোল আদায় করা হবে। তাছাড়া ২০১৬ সালে ঢাকার জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কটি চার লেনে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। শুরুতে সার্ভিস লেনের সংস্থান না থাকলেও পরে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেজন্য প্রকল্পটি শেষ করতে কিছুটা বাড়তি সময় লাগছে। কাজ শেষ হলে ওই মহাসড়কটিতে টোল আদায়ের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একইভাবে গাবতলী-নবীনগর মহাসড়কটিও এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ায় চালুর পর থেকেই ওই মহাসড়ক থেকে টোল আদায় হবে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে সওজ অধিদপ্তর দেশের ৩টি সড়ক-মহাসড়কের কিছু অংশে টোল আদায় করছে। ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক, ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ সড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদীশপুর-শেরপুর অংশে টোল চালু রয়েছে। বিগত ২০১৪ সালের টোল নীতিমালা অনুযায়ী ওই তিনটি সড়কে টোল আদায় হচ্ছে। টোল নীতিমালা অনুযায়ী জাতীয় মহাসড়কের ভিত্তি টোল নির্ধারণ করা হয়েছে কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৫০ পয়সা। ওই হিসেবে ট্রেইলারে টোল পড়বে কিলোমিটারপ্রতি ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। ভারী ট্রাকে কিলোমিটারপ্রতি টোল আদায় হবে ৩ টাকা। মাঝারি ও ছোট ট্রাকের কিলোমিটারপ্রতি টোল হার যথাক্রমে ১ টাকা ৫০ পয়সা ও ১ টাকা ১২ পয়সা। বাস ও মিনিবাসের কিলোমিটারপ্রতি টোল হার যথাক্রমে ১ টাকা ৩৫ পয়সা ও ৯০ পয়সা। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে ট্রেইলারে কিলোমিটারপ্রতি ৫ টাকা, ভারী ট্রাকে ৪ টাকা, মাঝারি ও ছোট ট্রাকে ২ ও ১ টাকা ৫০ পয়সা। বাস ও মিনিবাসের টোল হার যথাক্রমে কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৮০ পয়সা ও ১ টাকা ২০ পয়সা।
এদিকে সওজ অধিদপ্তরের সর্বশেষ মাসিক সমন্বয় সভায় মহাসড়ক থেকে টোল আদায়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় টোল আদায়ের কাজটি সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। পাশাপাশি একই রাস্তায় এক যানবাহনকে যেন একাধিকবার টোল দিতে না হয় সে বিষয়েও নজর রাখতে বলা হয়।
অন্যদিকে মহাসড়কে টোল আদায় প্রসঙ্গে সওজ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। আরো কয়েকটি মহাসড়কেও টোল আদায় করা হবে। তবে টোল আদায়ে যাওয়ার আগে সড়ক ব্যবহারকারীদের সওজ প্রয়োজনীয় সবটুকু সুবিধা দিতে চায়। সেজন্য মহাসড়কগুলোকে উন্নতমানের এবং বাধাহীনভাবে চলাচল উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে।