জন্মনিবন্ধন না হওয়ায় সরকারি হিসাবের বাইরেই রয়ে গেছে এক কোটি শিশু

জন্মনিবন্ধন না হওয়ায় সরকারি হিসাবের বাইরেই রয়ে গেছে এক কোটি শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে ৫ বছরের শিশুদের ৪০ শতাংশের জন্মসনদ রয়েছে, ১৭ শতাংশ নিবন্ধন করলেও এখনো জন্মসনদ পায়নি। ফলে জন্মনিবন্ধনের বাইরে থেকে যাচ্ছে বাকি ৪৩ শতাংশ। শিশুদের বড় একটি অংশ সরকারি হিসাবের বাইরে থাকায় জাতীয় নীতির পরিকল্পনা ব্যাহত হচ্ছে। জন্মনিবন্ধন না হওয়ায় দেশে ৫ বছরের কম বয়সের প্রায় এক কোটি শিশু সরকারি হিসাবের বাইরে রয়ে গেছে। ফলে তারা স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মৌলিক অধিকার, আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ‘দ্য বাংলাদেশ মাল্টিপাল ইনডিকেটর ক্লাসটার সার্ভে (এমআইসিএস)’ শিরোনামে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সঙ্গে যৌথ এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের কথা বলা হয়েছে। ওই সময়ে মধ্যে বিনা মূল্যে নিবন্ধন করা গেলেও পরে বিভিন্ন পর্যায়ে নামমাত্র ফি নিয়ে জন্মনিবন্ধন করে সরকার। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ১৭ কোটি ৫৯ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৭ জনের জন্মনিবন্ধন করা হয়েছে। তার মধ্যে ৫ বছরের নিচে শিশুর সংখ্যা ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭ হাজার ৭০০ জন। জন্মনিবন্ধনের বিষয়টি শিশুর অভিভাবকের ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করে। সঠিক সময়ে জন্মনিবন্ধন না হওয়ার পেছনে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তেমন কিছু করার নেই। কারণ যথাসময়ে জন্মনিবন্ধন করার জন্য সরকার এখনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। যে কারণে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় ৫ বছর বয়সের নিচে শিশুদের সংখ্যা জানাতে পারেনি। তবে ওই সংখ্যা ৪ কোটির কাছাকাছি হবে বলে জানিয়েছেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ জামিলা আক্তার।
সূত্র জানায়, শিশুর জন্মনিবন্ধনে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে খুলনা বিভাগ। বিভাগটিতে ৫ বছরের নিচে শিশুর জন্মনিবন্ধনের হার ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ। আর সবচেয়ে এগিয়ে থাকা সিলেট বিভাগে নিবন্ধনের হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ। বরিশালে ৬২ দশমিক ২, চট্টগ্রামে ৬৩ দশমিক ১, ঢাকায় ৫২ দশমিক ৩, ময়মনসিংহে ৫০ দশমিক ১, রাজশাহীতে ৫০ দশমিক ৬, রংপুরে ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে শহরাঞ্চলের চেয়ে জন্মনিবন্ধনে দেশের গ্রামাঞ্চল কিছুটা এগিয়ে রয়েছে। শহরাঞ্চলে জন্মনিবন্ধনের হার ৫৩ দশমিক ৮ ও গ্রামাঞ্চলে ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
সূত্র আরো জানায়, সারা দেশে ১২টি সিটি করপোরেশনের ১২৪টি আঞ্চলিক অফিস, ৩২৮টি পৌরসভা, ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১৫টি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড মিলিয়ে ৫ হাজার ৩০টি অফিস ও ৫৫টি দূতাবাসসহ মোট ৫ হাজার ৮৫টি নিবন্ধকের অফিসে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কার্যক্রম চলমান। অফিসে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে এবং অনলাইনের মাধ্যমে এ নিবন্ধন করা যায়। কিন্তু দেশে ৫ বছরের নিচে এক কোটির বেশি (অনুমিত) শিশুর জন্মনিবন্ধন না হওয়ায় সরকার জাতীয় নীতিমালার পরিকল্পনা সঠিকভাবে করতে পারছে না। জন্মনিবন্ধন সেবাটির বিষয়ে নারী ও মূলত কিশোরী মায়েরা তেমন অবগত নয়। সাধারণত ছয় বছর বয়সে সন্তানকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করার সময় অভিভাবকরা শিশুর জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করে থাকে। তাছাড়া সরকারি অফিসে আসার খরচ ও হয়রানির কারণেও তাদের মধ্যে এ সেবা গ্রহণে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিভাবকরাই শিশুদের জন্মনিবন্ধনের গুরুত্ব এখনো যথাযথভাবে বুঝতে পারছে না। জন্মনিবন্ধনের জন্য সরকার প্রশিক্ষিত লোকবল নিয়োগ দিলে সমস্যার হয়তো কিছুটা সমাধান হবে। ৪৫ দিনের পর জন্মনিবন্ধন করাতে হলে সরকারি নির্ধারিত কিছু ফি দিতে হয়। তবে অনেক সময় ওই ফি বেশি নেয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া এদেশে জন্মনিবন্ধন আইনের কিছু সংশোধনেরও প্রয়োজন রয়েছে। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জন্মনিবন্ধনের বিষয়টি হাসপাতালই করে থাকে। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধন হলে কোনো শিশুই জন্মনিবন্ধনের বাইরে থাকতো না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার জেনারেল একেএম মাকসুদুর রহমান জানান, শিশুর অভিভাবকরা জন্মনিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। ফলে যখন দরকার হয় তখনই কেবল শিশুর জন্মনিবন্ধন করে। এটা সচেতনতার অভাব তা বলা যাচ্ছে না। বরং প্রয়োজনটাই বড়।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন