সংরক্ষিত বনভূমি ছাড়তে নোটিস যাচ্ছে দখলদারদের কাছে

সংরক্ষিত বনভূমি ছাড়তে নোটিস যাচ্ছে দখলদারদের কাছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের এক লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর সংরক্ষিত বনভূমি উদ্ধারে মাঠে নামছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয় মন্ত্রণালয়। সংসদীয় কমিটির তাগাদায় আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে দখলদারদের সরে যাওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হবে। গতকাল রোববার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে সংরক্ষিত বনভূমি দখলদারদের তালিকা তৈরি করে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে উচ্ছেদের নোটিস দিতে বলেছে কমিটি। সংরক্ষিত বনভূমির বাইরে যেসব বনের জমি দখলে রয়েছে তার তালিকা আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে দিতে মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। সংসদীয় কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণির মোট বনভূমির পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ একর। এর মধ্যে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৪৫২ একর বনভূমি দখলে আছে। দেশের বনভূমি ৮৮ হাজার ২১৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের দখলে আছে। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “দখল বনভূমি উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসকরা চিঠি দেয়। কমিটি মন্ত্রণালয়কে বলেছে, আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে দখলদারদের চিঠি দিতে হবে। এই নোটিসের সাতদিনের মধ্যে দখলদার সরে না গেলে উচ্ছেদ করা হবে। তিনি জানান, এই নোটিস পাঠানোর আগে বিভাগীয় কমিশনার এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে বলা হয়েছে। কমিটির আগের বৈঠকে বনের জমি দখল করে রাখা ৯০ হাজার জনের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ওই তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। এক প্রশ্নে সাবের হোসেন বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য জমি উদ্ধার। এই যে সংরক্ষিত বন দখল করে রেখেছে এটা গেজেটভুক্ত। এখানে দখলদার আদালতে গিয়েও কিছু করতে পারবে না। বিভিন্ন ক্যাটাগরির বনের জমি দখল হয়ে আছে। আগে সংরক্ষিত বনের জমি উদ্ধারে মন্ত্রণালয়কে হাত দিতে বলা হয়েছে। এটা শুরু হলে অন্য দখলদাররা সতর্ক হয়ে যাবে। এদিকে সংসদীয় কমিটি জবর দখল হওয়া জমি উদ্ধারে আগের কার্যক্রমও খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। দখলদারদের নোটিস দেওয়া হয়েছে কীনা, দিয়ে থাকলে সেগুলোর তালিকা আর না দিয়ে থাকলে তার কারণ জানতে চেয়েছে। সংসদীয় কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বেদখল হয়ে যাওয়া সংরক্ষিত বনের জমি উদ্ধার নিয়ে মন্ত্রণালয় খুব একটা উদ্যোগী ছিল না। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তারা এই ব্যাপারটা কিছুটা হলেও স্বীকার করেছে। এখন সংসদীয় কমিটির তাগাদায় মন্ত্রণালয় মাঠে নামতে যাচ্ছে। অবৈধভাবে দখল করা বনভূমি বন্ধক দিয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়, তবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। বিপুল পরিমাণ বনভূমি জবরদখলের কারণ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিএস রেকর্ড মূলে রেকর্ডভুক্ত বনভূমি পরবর্তীতে এসএ/আরএস/বিএস জরিপে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত বনভূমি (সংরক্ষিত বনভূমি ছাড়া অন্যান্য যেমন রক্ষিত, অর্পিত বনভূমি) জেলা প্রশাসন কর্তৃক অনেকক্ষেত্রেই বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বনভূমির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ বিশেষ করে সড়ক নির্মাণের ফলে এর দুই পাশে জবর দখলের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় জনগণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি কর্তৃক বনভূমি দখল করে কৃষি কাজ, স্থায়ী স্থাপনা, বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, স্কুল, প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। অনেক জবরদখল করা বনভূমিতে শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। সাবের হোসেন বলেন, যারা বনের জমি নিজেদের দেখিয়ে ঋণ নিয়েছে তারা জালিয়াতি করেই নিয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়কে বলেছি এরকম ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সহায়তা নিতে হবে। সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে বন বিভাগের সকল জমির রেকর্ড ডিজিটাইজড করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে লাল তালিকাভুক্ত বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী ও উদ্ভিদ রক্ষায় যে সব গবেষণা হয়েছে এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর পরবর্তী ফলাফল কমিটিকে অবহিত করার সুপারিশ করা হয়। যেকোনো ইকোনমিক জোন তৈরির আগে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটিকে স্ট্রাটেজিক এনভায়রনমেন্ট প্ল্যান স্টাডি করার সুপারিশ করা হয়। সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, মো. রেজাউল করিম বাবলু, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এবং শাহীন চাকলাদার বৈঠকে অংশ নেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

১৬৯ কর্মচারিকে চাকরিচ্যুত করলো রাসিক

মেহেন্দিগঞ্জ পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কর্মসূচি-৩ পরকল্পের চেক বিতরণ