রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান: জাতিসংঘে চতুর্থবারের মতো রেজুলেশন গৃহীত

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান: জাতিসংঘে চতুর্থবারের মতো রেজুলেশন গৃহীত
ঢাকা: ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক জাতিসংঘ রেজুলেশনটিকে ধারাবাহিকভাবে সমর্থন জানানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।  জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে বিপুল ভোটে চতুর্থবারের মতো রেজুলেশনটি গৃহীত হলো। বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।  জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আরও বলেন, এক মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এই সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজছে, যা নিহিত রয়েছে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের মধ্যে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের জরুরি সমাধানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানকে রেজুলেশনটি জোরদার করবে যে সঙ্কটের শিকড় সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমারেই নিহিত। ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে রেজুলেশনটি উত্থাপন করে যাতে পৃষ্ঠপোষকতা দেয় ১০৪টি দেশ। এটি মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ অন্যান্য সহিংসতার শিকার নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বিপুল সংখ্যক জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রের শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও অকুন্ঠ সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ।  রেজুলেশনটির পক্ষে ভোট দেয় ১৩২টি দেশ, বিপক্ষে ৯টি আর ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে ৩১টি দেশ।  ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আন্তঃআঞ্চলিক জোটের সমর্থন ও সহ-পৃষ্ঠপোষকতা পায় রেজুলেশনটি। আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের সাময়িক আদেশ, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের তদন্ত শুরুর বিষয় এবং রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে বঞ্চিত করার মতো নতুন বিষয়গুলো উঠে এসেছে এবারের রেজুলেশনটিতে। এছাড়া রেজুলেশনটিতে মিয়ানমারকে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে। বিষয়গুলো হলো- রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ সমস্যাটির মূল কারণ খুঁজে বের করা, প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা, প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার বাস্ত্যুচুত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে যে অনুকরণীয় মানবিক দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেছে তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে রেজুলেশনটিতে। এছাড়া কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মতো বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বড় আশ্রয় শিবিরে কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার রোধে বাংলাদেশ সরকারের সফল প্রচেষ্টার স্বীকৃতিও দেওয়া হয়েছে এতে। বাংলাদেশ গৃহীত মানবিক প্রচেষ্টায় সমর্থন প্রদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছে রেজুলেশনটিতে। এই রেজুলেশন বাংলাদেশসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে গঠনমূলক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারকে নতুনভাবে চাপ সৃষ্টি করবে মর্মে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চলমান বিচার ব্যবস্থা এবারের রেজুলেশনের ফলে আরও বেশি আন্তর্জাতিক সমর্থন পাবে মর্মেও উল্লেখ করেন রাবাব ফাতিমা। রেজুলেশনটি ভোটে দেওয়ার আগে এর সমর্থনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে জার্মানের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং ওআইসি’র পক্ষে সৌদি আরবের স্থায়ী প্রতিনিধি বক্তব্য দেন। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, রেজুলেশনটি মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দীর্ঘকাল ধরে চলমান দুর্দশা মোকাবিলায় অবদান রাখবে, নিজ বাসভূমিতে নিরাপদভাবে এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করবে এবং মিয়ানমারকে চ্যালেঞ্জসমূহ কাটিয়ে উঠতে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ ঘটাতে সাহায্য করবে। তাঁরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব ইস্যু সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কাঙ্ক্ষিত সমাধানে মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের এই রেজুলেশন আন্তর্জাতিক রীতিনীতির গুরুত্বপূর্ণ এক উৎস হিসেবে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

পবিপ্রবিতে কৃষি গুচ্ছের ভর্তিতে ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক

কাউখালীতে শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু