চট্টগ্রাম: সংকট মোকাবেলায় ভারতের বিকল্প দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রথম চালান খালাস হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে। সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ৫৮ মেট্রিক টন মিয়ানমারের পেঁয়াজের ছাড়পত্র ইস্যু করেছে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র।
কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল জানান, চট্টগ্রামের আমদানিকারক কায়েল স্টোর মিয়ানমার থেকে ৫৪ টন পেঁয়াজ এনেছেন। আমরা এ চালানের অনুকূলে ছাড়পত্র ইস্যু করেছি। চালানটি খালাস হয়ে গেছে বন্দর থেকে। এরপর পাকিস্তান থেকে এসেছে ১১৬ টন। আশাকরি, পাইপ লাইনে থাকা অন্যান্য আমদানিকারকের পেঁয়াজও দ্রুত দেশে ঢুকবে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৫৪ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য ৩২২টি অনুমতিপত্র (আইপি) নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চীন, মিশর, তুরস্ক, মায়ানমার, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, মালয়েশিয়া, সাউথ আফ্রিকা, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ভারত (২০০ টন) ও পাকিস্তান- এ ১২ দেশ থেকে এসব পেঁয়াজ আমদানি করবেন তারা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের সংকট মোকাবেলায় চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর দ্রুত খালাসের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কাস্টম হাউসের অভ্যন্তরীণ ‘গ্রুপ-১’ শাখায় পেঁয়াজের চালান খালাসের অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। গ্রুপ-১ এর দায়িত্বে থাকা একজন সহকারী কমিশনার বলেন, পেঁয়াজের চালান খালাসে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
পেঁয়াজের চালান খালাসে নিয়োজিত একজন সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রথমে ২ কনটেইনার পেঁয়াজ খালাস হয়েছে। আগ্রাবাদের কায়েল স্টোর এ পেঁয়াজ আমদানি করেছিল মিয়ানমার থেকে। এরপর আরও ৪ কনটেইনার পেঁয়াজ আসে পাকিস্তান থেকে। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কাস্টম হাউসের পক্ষ থেকে এ ৪ কনটেইনার পেঁয়াজের এক্সামিন সম্পন্ন হয়েছে। আশাকরি আজকের মধ্যেই বন্দর থেকে খালাস নিতে পারবো।
দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ। এখানকার পেঁয়াজ রসুন আদার বড় বিপণিকেন্দ্র হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, পেঁয়াজ সংকট শুরুর পর ভারতের বিকল্প দেশের মধ্যে সাগর পথে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে প্রথম ঢুকছে মিয়ানমারের পেঁয়াজ। সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ২ কনটেইনার পেঁয়াজ ঢুকেছে বিভিন্ন আড়তে। এ পেঁয়াজের আকার, রং ও স্বাদ দেশি পেঁয়াজের মতো হওয়ায় দামও ভালো পেয়েছেন আমদানিকারক। খাতুনগঞ্জের আড়তে প্রতিকেজি মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা।
একজন আড়তদার জানান, মিয়ানমারের পেঁয়াজ সাগর পথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনাটা সময় ও খরচসাপেক্ষ। মিয়ানমার, পাকিস্তানের পেঁয়াজ যেহেতু বন্দরে পৌঁছেছে অন্যান্য দেশের পেঁয়াজও শিগগির চলে আসবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দুইটি জাহাজে ৪০ ফুট দীর্ঘ ৯টি কনটেইনারে ২৫৮ টন পেঁয়াজ পৌঁছেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে ‘কোটা এনগেরিক’ জাহাজে আসা ২ কনটেইনারে কায়েল স্টোরের ৫৪ টন খালাস হয়েছে বন্দর থেকে। এগুলোর রফতানি কারক সিঙ্গাপুরের ইন্দো সুয়েজ ট্রেডিং লিমিটেড।
অন্যদিকে ‘এক্স-প্রেস লোটসি’ জাহাজে এসেছে তিনজন আমদানিকারকের ৭ কনটেইনার পেঁয়াজ। চট্টগ্রামের গ্রিন ট্রেডের নামে পাকিস্তান থেকে এসেছে ৪ কনটেইনারে ১১৬ টন এবং ঢাকার সজীব এন্টারপ্রাইজের নামে এসেছে ২ কনটেইনারে ৫৯ টন। সজীবের নামে ইউএই থেকে এসেছে ১ কনটেইনারে ২৯ টন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, পেঁয়াজের সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা চালান বন্দরে আসতে শুরু করেছে। এসব চালান যাতে দ্রুতসময়ে ডেলিভারি দেওয়া যায় সে লক্ষ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ শতভাগ প্রস্তুত। ইতিমধ্যে কয়েকটি চালান দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালাস হয়েছে।