বাংলাদেশের জলসীমানায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে

বাংলাদেশের জলসীমানায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক ; বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমানায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ বেড়েছে। গত দুমাসে সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন করে এ দেশের জলসীমানায় মাছ ধরার অভিযোগে কোস্টগার্ড সদস্যরা সুন্দরবন উপকূল এলাকা থেকে চারটি ফিশিং ট্রলারসহ ৬১ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এ দেশের জলসীমানায় ধরা পড়া বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ। ভারতীয় জেলেরা অবৈধভাবে এসে অবাধে মাছ শিকার করে নিয়ে যাওয়ায় সমুদ্রে মাছ পাচ্ছেন না দুবলার চরের গভীর সমুদ্রগামী জেলেরা। শূন্য পড়ে রয়েছে দুবলার চরের শত শত শুঁটকি তৈরির মাচা। কেনাবেচা কমে গেছে চরের আলোরকোলের দোকানপাটেও। স্থানীয়দের অভিযোগ, সারা বছরই ভারতীয় জেলে ও ট্রলারের অনুপ্রবেশ ঘটে থাকে। তবে শীত মৌসুমে তাদের আনাগোনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অনেক সময় তারা মাছ শিকারের পাশাপাশি দেশি জেলেদের ওপর হামলা, মারধর ও লুটপাটও চালায়। সুন্দরবন উপকূলে মাছ আহরণকারী জেলেদের সংগঠন ‘দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপে’র ম্যানেজার মো. ফরিদ আহম্মেদ জানান, ভারতের জেলেরা এ দেশের ১নং ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছাকাছি চলে আসে, যা দুবলার চর থেকে মাত্র পাঁচ-ছয় নটিক্যাল মাইল দূরে। তিনি আরও বলেন, তাদের ট্রলারে জিপিআরএস ও ফিশ ফাইন্ডার রয়েছে। তা দিয়ে দিক নির্ণয় ও মাছের অবস্থান শনাক্ত করে ঘন ফাঁসের নেট দিয়ে মাছ ছেঁকে নিয়ে যায়। ফলে আমরা লাক্ষা, ছুরি, রূপচাঁদা, লইট্যাসহ বিভিন্ন দামি মাছ পাচ্ছি না। দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল আহমেদ বলেন, ভারতীয় জেলেরা জলসীমানার মধ্যে ঢোকার পর এ দেশের জেলেদেরও মাছ শিকারে বাধা দেয়। দেশি জেলেদের ট্রলারে হামলা চালিয়ে মালপত্র, মাছ ও তা ধরার সরঞ্জাম লুটপাটসহ মারধর করে। মোংলা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, ২৯ জানুয়ারি দুপুরে কোস্টগার্ড সদস্যদের অভিযানে বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ শিকারের সময় এফবি শঙ্খদ্বীপ ও স্বর্ণতারা নামের দুটি ট্রলারসহ ২৮ ভারতীয় নাগরিক ধরা পড়ে। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি আরো বলেন, এর আগে ২ ডিসেম্বর ১৭ জন জেলেসহ ‘এফ বি মা শিবানী’ ও ২৩ ডিসেম্বর ১৬ জন জেলেসহ একটি ট্রলার জব্দ করে কোস্টগার্ড। আদালত সূত্র জানায়, বেশি মাছ ধরতে সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন করলেও ভারতীয় এসব জেলে ধরা পড়ার পর ‘দিক ভুল’ করে এ দেশে চলে এসেছে জানিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়ে ক্ষমা চেয়ে কৌশলে শাস্তি কমিয়ে নেয়। জেল খেটে তাদের কেউ কেউ দেশে ফিরে পুনরায় একইভাবে অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। আলোরকোলের শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণে নিয়োজিত সাতক্ষীরার আশাশুনির জেলে আতিয়ার রহমান, হামিদ মোড়ল এবং বাগেরহাটের রামপালের আক্কাস শেখ ও প্রদীপ মিস্ত্রি জানান, প্রত্যেকে ১৫-২০ বছর ধরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করায় জড়িত। কিন্তু এবারের মতো এত কম মাছ আগে কখনও দেখেননি তারা। মাঝেরকেল্লার শুঁটকি ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের মো. জাহিদ বহদ্দার জানান, গত বছর এ চরে চট্টগ্রামের সাতজন বহদ্দার ছিলেন। এবার এসেছেন মাত্র দুজন। দুবলা জেলেপল্লি টহল ফাঁড়ির ওসি প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় বলেন, গত চার গোনে (অমাবস্যা-পূর্ণিমার হিসাবে) জেলেরা কোনো মাছ পায়নি। এ অবস্থা চললে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। জেলে-মহাজনরাও চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে কোস্টগার্ডকে জানাতে সংশ্নিষ্ট এলাকার বন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের ৮ মাস না পেরোতেই ভাঙন

সিন্ডিকেটের কারনে আলুর দামের উর্ধ্বগতি